ঈদের ছুটিতে বাঙ্গালী নদীতে উৎসবের আমেজ
Published: 4th, April 2025 GMT
এটি কোনো পর্যটনকেন্দ্র নয়, এখানে নেই কোনো সাজানো বিনোদনব্যবস্থা। তবু ঈদের ছুটিতে হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। বয়ে চলা নদীর পানির স্রোতে শরীর ভাসিয়ে নিচ্ছেন, কেউ গাইছেন গান, কেউ তুলছেন ছবি। এমন দৃশ্য বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা সেতুর নিচে, বাঙ্গালী নদীতে। এই নদীর পানিতে ঈদ–আনন্দে ভাসা দর্শনার্থীরা জায়গাটির নাম দিয়েছেন ‘বগুড়ার জাফলং’।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরেই জমে উঠেছে এই ভিড়। টানা চার দিন ধরে চলছে এই আনন্দোৎসব। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ আসছেন নদীর ধারে। কেউ পানিতে নামছেন, কেউ আবার দূর থেকে উপভোগ করছেন দৃশ্য। এরই মধ্যে জায়গাটি ঘিরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান।
গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, জোড়গাছা সেতুর পাইলিংয়ের মেরামতের কাজ চলছে। সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে ২০০৭ সালে নির্মিত হয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এই মেরামতের কাজ করছে। এর জন্য নদীর একটি বড় অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট অংশ দিয়ে একটু জোরেই বয়ে যাচ্ছে পানির স্রোত। আর জায়গাটিই হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর ঈদের সময়কার আকর্ষণ।
পানিতে নেমে আনন্দ করছে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষও। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রতিদিন এখানে অন্তত তিন থেকে চার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে। এরই মধ্যে জায়গাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়ছে।
জায়গাটি ঘিরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান। বিক্রিও হচ্ছে ভালো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।
রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা।
বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।
বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।
আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা।
উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।
ঢাকা/টিপু