বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন (টুকু) বলেছেন, দেশীয় শিল্পীদের মূল্যায়ন করতেই ‘স্বাধীনতা কনসার্ট’–এর আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বর্তমানে দেশীয় শিল্পীদের মূল্যায়ন না করার সংস্কৃতি চলছে। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তা থেকেই দেশীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় স্বাধীনতা কনসার্টের আয়োজন করেছে ‘সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’।

সুলতান সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে রাজধানী ঢাকাসহ চার বিভাগীয় শহরে ১১ এপ্রিল এই ‘স্বাধীনতা কনসার্ট’ অনুষ্ঠিত হবে।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কনসার্টের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সুলতান সালাহউদ্দিন এ কথা বলেন।

সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে জাতীয় দিবসগুলোতে হিন্দি ভাষাভাষী শিল্পীদের এনে বাংলাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করানো হতো। ইদানীং পাকিস্তানি শিল্পীদের বাংলাদেশে আনা হচ্ছে বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতায়। আমরা মনে করি, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ বাংলাদেশ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ বাংলাদেশ, ২ লাখ মা–বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এ বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকেই আমরা বুকে ধারণ করতে চাই।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য মেধাবী সাংস্কৃতিক ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁরা তাঁদের পারফরম্যান্স ইতিমধ্যে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে অনেককে পারফরম্যান্স করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে যাঁরা আছেন, তাঁরাও পারফরম্যান্স করার মতো পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারেননি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে আমাদের জাগ্রত করতে হবে, বাংলাদেশকে আমাদের তুলে ধরতে হবে।’

সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘সবাইকে নিয়েই এ দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব—এ চিন্তা থেকে দেশের শিল্পীদের ব্র্যান্ডিং করার জন্য আমাদের এ আয়োজন। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে এখানে (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কনসার্ট করেছিলাম, যেটিকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে। সেদিনই আমরা স্বাধীনতা দিবসে আরেকটি কনসার্টের ঘোষণা দিই। সে চিন্তা থেকে ১১ এপ্রিল স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়াও এ কনসার্ট চারটি বিভাগে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে অনুষ্ঠিত হবে।’

সুলতান সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্পীদের যে প্রতিভা আছে, সেটি মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাই এবং আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়ে আমরা পথ চলতে চাই। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সেটি তুলে ধরতে চাই এবং তাদের মনের মধ্যে সেটি ধারণ করার জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’–এর সদস্য জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত কনস র ট ব এনপ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’