ধ্রু ব অরণ্য বয়সে ছোট হলে কী হবে, বড় ভাই আরিয়ান তূর্য তার সঙ্গে পেরে ওঠে না। অনেক কিছুই ধ্রুব আগেভাগে বুঝে ফেলে। আরিয়ান তখন গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খায়। বই পড়ার কথাই ধরা যাক না কেন! ধ্রুব এলোমেলোভাবে বইয়ের পাঁচ থেকে সাতটা পৃষ্ঠা খুললেই বলতে পারে, ভেতরে ছবি আছে কী নেই। অন্যদিকে এটি বোঝার জন্য আরিয়ানকে একটা একটা করে পুরো বইয়ের পাতা ওল্টাতে হয়। বোকা না আরিয়ানটা!
আব্বু ছোট-বড় সবার বই-ই পড়েন। যখন তিনি পড়েন দুই ভাইয়ের চেষ্টা থাকে, বইয়ের ভেতরটা উল্টেপাল্টে দেখা। বইয়ে ছবি থাকলে সেটিই ভালো, না থাকলে পচা। সেদিন আব্বু ভালো একটি বই পড়ছিলেন। বইটার নামটাও ভারী সুন্দর– রাজুর ভূতুড়ে ম্যাজিক। লেখকের নাম মুহসীন মোসাদ্দেক। ধ্রুব যথারীতি বই উল্টেপাল্টে দেখে বললো, ‘আব্বু, এই বইয়ের নাম কী?’
‘রাজুর ভূতুড়ে ম্যাজিক।’
‘কিন্তু এটা তো রাজু না!’
প্রচ্ছদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললো সে। আব্বু যেন কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলেন। একটু ভেবে বললেন, ‘এটাই রাজু। বইয়ের ভেতরে নামগল্পেও রাজুর ছবি আঁকা হয়েছে।’
আরিয়ান তূর্য এবার বিপুল বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে বললো, ‘এটা রাজু হলে মীনা কই?’
আব্বু এতোক্ষণে বুঝতে পারলেন বিষয়টা। ওরা বইয়ে ছবি আর টেলিভিশনে কার্টুন দেখতে দেখতে রাজুকে ভালোভাবেই চিনে গেছে। তাই অন্য রাজুকে সন্দেহ করে!
আব্বু দুই ভাইকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটা হচ্ছে আরেক রাজু।
সেটা দুজনের একজনও মানলে তো! রাজুর চেহারা এমন নয়। আর রাজু ম্যাজিকও দেখায় না। আব্বু বুঝে গেলেন কার্টুনের রাজু-মীনার বাইরে যে এই নামে আরও কেউ থাকতে পারে, ওরা মেনে নেবে না। অবশ্য আরিয়ান ধ্রুব’র বয়সী হলে তিনিও নিশ্চয়ই আপত্তি জানাতেন।
বোঝাতে না পেরে আব্বু আবার পড়ায় মনোযোগ দিলেন। এই বইয়ে মজার ভূতের গল্প আছে। অন্যান্য গল্পের বইয়ে ভূতগুলো ভয়ংকর হলেও এটাতে ভূতগুলো যথেষ্ট ভালো ও মিষ্টি। মানুষকে ভয় দেখায় না। এটা ওটা কেড়ে নিয়ে খেতে চায় না।
আব্বু বেশিক্ষণ পড়ায় মনোযোগ রাখতে পারলেন না। কিছুক্ষণ পরে বেজে উঠল কলিং বেল। যে কেউই বেল বাজাক, দুই ভাই আনন্দ নিয়ে দরজার কাছে চলে যাবেই। এখনো গেলো। আব্বু দরজা খুলতেই দেখলেন, একজন চাচি আর একটা বাবু দাঁড়িয়ে আছে। চাচি আব্বুকে পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘আমরা উপরের ফ্ল্যাটে এসেছি। পরিচিত হতে এলাম।’
‘খুব ভালো। আসুন।’
আব্বু ভেতরে নিয়ে এলেন তাদের। আম্মুর সঙ্গে বোধহয় আরও আগেই পরিচয় হয়ে গিয়েছিলো, তিনি মেহমান দেখে বলে উঠলেন– ‘আরে আপা, আপনি! এদিকে আসুন। আপনাকে একটা জিনিস দেখাই।’
কী দেখানো হচ্ছে, সেদিকে গেলো না ওরা। আব্বু বাবুকে আদর করে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তোমার নাম কী?’
‘আমার নাম রাজু।’
এমন জবাবে আরিয়ান-ধ্রুব দুজনেই চমকালো। সমস্বরে বললো, ‘হতেই পারে না! ও মিথ্যা বলছে, আব্বু!’
আব্বু হেসে বললেন, ‘ছোটরা কখনো মিথ্যা বলে না। ওর নাম রাজু।’
দুজন মাথা চুলকাল একসঙ্গে- ‘কিন্তু.
‘কোনো কিন্তু নয়। ও আজ থেকে তোমাদের বন্ধু।’
ধ্রুব প্রশ্ন করলো, ‘ওকে আমরা কী ডাকবো?’
‘রাজু। রাজু ভাইয়া।’
এবার আরিয়ান বললো, ‘আচ্ছা রাজু, তোমার নাম কি আসলেই রাজু?’
‘হ্যাঁ। র আকার রা, বর্গীয় জ হ্রস্ব উকার জু।’
‘তাহলে টেলিভিশনে তোমাকে দেখি না কেন? আরেকজন রাজুকে দেখায় কেন!’
‘কার্টুনের রাজু আর মানুষ রাজু কিন্তু এক নয়!’
‘তুমি তো দেখছি বড়দের মতো অনেক কিছু জানো!’
‘হ্যাঁ। জানি। যতো বড় হবো, আরও জানতেই থাকবো।’
ধ্রুব বললো এবার– ‘তুমি যে রাজু, এটা আমরা অন্যদের বিশ্বাস করাবে কীভাবে?’
‘খুব সহজ। তোমরা চাইলে আমার ছবি আঁকতে পারো। তারপর এই বিল্ডিংয়ে সবাইকে, বাইরের মানুষজনকে দেখিয়ে বলতে পারো এটা রাজুর ছবি!’
‘এতেই হবে?’
‘হয়ে যাবে। এই ছবি অন্যরা দেখতে দেখতেই চিনে যাবে এই এলাকার রাজু আসলে কে!’
আব্বু সায় দিয়ে বললেন, ‘রাজু ঠিক কথা বলেছে। প্রচার ও বিজ্ঞাপনের একটা শক্তি আছে। সহজেই পরিচিত করানো। ঠিক এই কারণেই তোমরা কার্টুনের মীনা-রাজুকে ভালোভাবে চিনলেও বাস্তবের এই রাজুকে মেনে নিতে পারছো না।’
আরিয়ান বললো, ‘না, আব্বু। বিশ্বাস করেছি তো! এই রাজু আমাদের বন্ধু! আমরা এখন একত্রে খেলবো। ট্রেনের উপরে ঘোড়ার গাড়ি বসিয়ে দিলে কীভাবে টগবগ করে দৌড়ায়!’
রাজু বললো, ‘কই বন্ধু, দেখি তোমাদের ট্রেন আর ঘোড়ার গাড়ি!’
সাবধান বাণী দিয়ে ধ্রুব বললো, ‘বের করছি। কিন্তু খবরদার, ঘোড়ার উপরে ট্রেন বসাবে না। তাহলে ঘোড়া কাটা পড়ে মারা যাবে!’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?