পোশাক খাতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সংকটে, ভারত পাবে সুবিধা
Published: 5th, April 2025 GMT
তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানিতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ দুটির পোশাক শিল্প। অন্যদিকে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে ২৬ শতাংশ। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি বড় সুবিধা পাবে। গত বুধবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন ওই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এত চরম কিছু আশা করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ব্যবসা ও হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তারা। একইভাবে শ্রীলঙ্কার তৈরি পোশাক খাতও বড় ধাক্কার মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্ষতির মাঝেই ভারতের সামনে খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) জানিয়েছে, শুল্ক ঘোষণার পরপরই তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশলের ওপর জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি ও জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ অবদান রাখে। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি কর্মরত।
বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস রপ্তানিকারক শহীদুল্লাহ আজিম। তিনি রয়টার্সকে জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে পোশাক সরবরাহ করে থাকে। এখানে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কর্মী কাজ করেন। হঠাৎ শুল্ক আরোপের ফলে অনেক অর্ডার (ক্রয়াদেশ) বাতিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক মূল্য সুবিধা হারাতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে, যা এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, যার মূল্য প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দ্বীপরাষ্ট্রটি বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল যোহান লরেন্স বলেন, কম শুল্কের দেশগুলো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।এতে স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারাতে পারে। ফোরামের পরামর্শক তুলি কুরে নিউইউর্ক টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের শোকবার্তা লিখতে হবে। ৪৪ শতাংশ শুল্ক চাট্টিখানি কথা নয়।’ প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকের দপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি যৌথ প্যানেল গঠন করা হয়েছে।
ভারতের সামনে এখন সম্ভাবনার নতুন দরজা। টমি হিলফিগার ও লেভিসের মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করা ভারতের ইভেন্স গ্রুপ ইতোমধ্যেই মার্কিন বাজারে তাদের উপস্থিতি জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। ইভিন্স গ্রুপের আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই মার্কিন ক্রেতারা মূলত ভারতের দিকে ঝুঁকছিলেন। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের ওপর শুল্ক কম ১১ শতাংশ। এতে ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই ভারতের দিকেই ঝুঁকবে। যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি মাত্র ৬-৭ শতাংশ, তবুও মার্কিন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, ৩০টি শীর্ষ ব্র্যান্ড বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতে ঝুঁকছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে এখন কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা বাড়ানো। সেই সঙ্গে বিকল্প বাজার খোঁজা ও ইইউ, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল নিতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য সরকারকে বিশেষ সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের ধাক্কা বিশ্বের পোশাক শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর জন্য অনেক বড়। ইক্যুইটি ফার্ম উইলিয়াম ব্লেয়ারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত তৈরি পোশাকের প্রায় ৮৫ শতাংশ উৎপাদন করে, সেসব দেশের ওপর গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
আগামী মঙ্গলবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা আবার শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে এই আলোচনা শুরু হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবারের আলোচ্যসূচি হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো আগের অসমাপ্ত আলোচনা সমাপ্ত করা (সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও নারী প্রতিনিধিত্ব), দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আলোচনা শেষ হওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথমে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করবেন। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা ব্রিফ করবেন। আলোচনা অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন-নিউজ (বিটিভি-নিউজ) সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করে কমিশন। গত ১৯ মে পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে আলোচনা করেছে কমিশন।
প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অনেক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও মৌলিক সংস্কারের কিছু প্রস্তাব নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। সেসব প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরের দিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তিনটি বিষয়ে (সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও নারী প্রতিনিধিত্ব) আলোচনার পর ওই দিন অধিবেশন মুলতবি করা হয়। সেই মুলতবি বৈঠকই মঙ্গলবার আবার শুরু হচ্ছে।
আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবারও আলোচনা হবে বলে আজ রোববার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবারের আলোচ্য সূচি (আলোচনার বিষয়বস্তু) পরে জানাবে কমিশন।