ভোলায় ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তিদের আটকের অভিযোগ তুলে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে বিএনপির মানববন্ধন
Published: 5th, April 2025 GMT
ভোলায় জেলেদের হয়রানি ও ‘নিরপরাধ’ লোকজনকে আটক করে অস্ত্র–মাদক দিয়ে আটক করার অভিযোগ তুলে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। আজ শনিবার ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি।
মানববন্ধন থেকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অস্ত্রসহ কোস্টগার্ডের হাতে আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে ‘সম্পূর্ণ নিরপরাধ’ দাবি করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। আটক পাঁচজন হলেন ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির (বর্তমানে কমিটি নেই) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সহসভাপতি মো.
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিফাত আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের আটক করেছেন। এ সময় তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ, টাকা ও মাদক পাওয়া যায়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ভোলার খেয়াঘাটে নিজেদের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড। ব্রিফিংয়ে কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা রিফাত আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের সাধারণ জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল একদল সন্ত্রাসী। স্থানীয় জনসাধারণ কোস্টগার্ডের শরণাপন্ন হলে তাঁরা এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভেদুরিয়া ইউনিয়নে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ২১টি হাতবোমা, ৫৬৯টি ইয়াবা বড়িসহ ৪৪ হাজার ৫১০ টাকা জব্দ করা হয়।
আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে দলীয় নেতা–কর্মী উল্লেখে আজ ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি। সভায় ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি অলিউল্লাহ মাস্টার, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. কামরুল হাসান ও জাকির হোসেনসহ যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা বক্তব্য দেন। কর্মসূচিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা–কর্মী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড বৃহস্পতিবার রাতে যাঁদের আটক করেছে, তাঁদের চারজন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী। তাঁরা নিরপরাধ। অন্যজন জিয়াউর রহমান কোস্টগার্ডের সোর্স। তিনি অপরাধী। তাঁকে নিয়ে বিএনপির কোনো অভিযোগ নেই।
মানববন্ধনে বিএনপি নেতা অলিউল্লাহ মাস্টার বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড ভেদুরিয়া ইউনিয়নে কিছু সোর্স পালন করে আসছে। যারা প্রত্যেকে নানা অনিয়মে জড়িত। যারা জেলেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে তাঁকে জলদস্যু বানিয়ে চালান দিচ্ছে। নিরপরাধ জেলেদের জাল ধরে কিছু পোড়াচ্ছে আর বেশির ভাগ ভালো জাল বিক্রি করছে। মাছ ধরে কিছু বিলি করে, বাকি নিজেরা নিয়ে নিচ্ছে। যারা বালু উত্তোলন করছে, তাদের কিছু না বলে যারা বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করে, কোস্টগার্ড তাদের ধাওয়া করছে।’ তিনি বলেন, বিএনপির এক নেতা কোস্টগার্ডের এক সোর্সের কাছে প্রায় দুই লাখ টাকা পাবেন। ওই টাকা পরিশোধ না করায় সোর্সের মোটরসাইকেল আটক করে বিএনপির কার্যালয়ে রেখে দিয়েছেন ওই নেতা। এরই জেরে কোস্টগার্ড বিএনপি ও সহযোগী নেতা–কর্মীদের অস্ত্র ও মাদক দিয়ে আটক করেছে। যাঁরা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তাঁরা এসব নেতা–কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি চান।
আটক জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সোহেল বলেন, ‘আমার বাবা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তাঁকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ধরার জন্য তাঁদের ঘর ভাঙচুর করেছেন। আলমারিতে ও টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর অস্ত্র রেখে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করেছেন। আমার বাবার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সিয়ামউল হক বলেন, তাঁরা তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের আটক করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র, বোমা, মাদক ও টাকা জব্দ করেছেন। আটক আসামিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ আছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। তাঁদের কাছে চাঁদাবাজির শিকার ব্যক্তিরাও অভিযোগ করেছেন। তারপরই অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন রপর ধ ব এনপ র ন ব এনপ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫