ভোলায় জেলেদের হয়রানি ও ‘নিরপরাধ’ লোকজনকে আটক করে অস্ত্র–মাদক দিয়ে আটক করার অভিযোগ তুলে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। আজ শনিবার ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি।

মানববন্ধন থেকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অস্ত্রসহ কোস্টগার্ডের হাতে আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে ‘সম্পূর্ণ নিরপরাধ’ দাবি করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। আটক পাঁচজন হলেন ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির (বর্তমানে কমিটি নেই) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সহসভাপতি মো.

জাহাঙ্গীর আলম (৬৫), যুবদল কর্মী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৫) ও আব্বাস উদ্দিন (৩০), ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক মো. সেলিম (২৬) ও মো. জিয়াউর রহমান (৩০) নামের এক ব্যক্তি। এর মধ্যে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের কোনো অভিযোগ নেই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিফাত আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের আটক করেছেন। এ সময় তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ, টাকা ও মাদক পাওয়া যায়।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ভোলার খেয়াঘাটে নিজেদের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড। ব্রিফিংয়ে কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা রিফাত আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের সাধারণ জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল একদল সন্ত্রাসী। স্থানীয় জনসাধারণ কোস্টগার্ডের শরণাপন্ন হলে তাঁরা এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভেদুরিয়া ইউনিয়নে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ২১টি হাতবোমা, ৫৬৯টি ইয়াবা বড়িসহ ৪৪ হাজার ৫১০ টাকা জব্দ করা হয়।

আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে দলীয় নেতা–কর্মী উল্লেখে আজ ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি। সভায় ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি অলিউল্লাহ মাস্টার, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. কামরুল হাসান ও জাকির হোসেনসহ যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা বক্তব্য দেন। কর্মসূচিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা–কর্মী অংশ নেন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড বৃহস্পতিবার রাতে যাঁদের আটক করেছে, তাঁদের চারজন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী। তাঁরা নিরপরাধ। অন্যজন জিয়াউর রহমান কোস্টগার্ডের সোর্স। তিনি অপরাধী। তাঁকে নিয়ে বিএনপির কোনো অভিযোগ নেই।

মানববন্ধনে বিএনপি নেতা অলিউল্লাহ মাস্টার বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড ভেদুরিয়া ইউনিয়নে কিছু সোর্স পালন করে আসছে। যারা প্রত্যেকে নানা অনিয়মে জড়িত। যারা জেলেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে তাঁকে জলদস্যু বানিয়ে চালান দিচ্ছে। নিরপরাধ জেলেদের জাল ধরে কিছু পোড়াচ্ছে আর বেশির ভাগ ভালো জাল বিক্রি করছে। মাছ ধরে কিছু বিলি করে, বাকি নিজেরা নিয়ে নিচ্ছে। যারা বালু উত্তোলন করছে, তাদের কিছু না বলে যারা বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করে, কোস্টগার্ড তাদের ধাওয়া করছে।’ তিনি বলেন, বিএনপির এক নেতা কোস্টগার্ডের এক সোর্সের কাছে প্রায় দুই লাখ টাকা পাবেন। ওই টাকা পরিশোধ না করায় সোর্সের মোটরসাইকেল আটক করে বিএনপির কার্যালয়ে রেখে দিয়েছেন ওই নেতা। এরই জেরে কোস্টগার্ড বিএনপি ও সহযোগী নেতা–কর্মীদের অস্ত্র ও মাদক দিয়ে আটক করেছে। যাঁরা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তাঁরা এসব নেতা–কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি চান।

আটক জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সোহেল বলেন, ‘আমার বাবা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তাঁকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ধরার জন্য তাঁদের ঘর ভাঙচুর করেছেন। আলমারিতে ও টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর অস্ত্র রেখে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করেছেন। আমার বাবার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’

এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সিয়ামউল হক বলেন, তাঁরা তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের আটক করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র, বোমা, মাদক ও টাকা জব্দ করেছেন। আটক আসামিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ আছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। তাঁদের কাছে চাঁদাবাজির শিকার ব্যক্তিরাও অভিযোগ করেছেন। তারপরই অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন রপর ধ ব এনপ র ন ব এনপ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন : হুশিয়ারী

বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে  মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থী,  শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সমাবেশ শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।

বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই কর্মসুচিতে সিদ্ধিরগঞ্জের দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি  বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের হাতে " প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ বৈষম্য কেন? শিক্ষা উপদেষ্টা জবাব চাই" সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড শোভা পায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিল্লাল হোসেন রবিন, ঢাকা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি জি এইচ ফারুক, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো: সামসুজ্জামান, প্রধান সমন্বয়ক মো: সাইফুল ইসলাম রুবেল, মহাসচিব মো: সাখাওয়াত হোসেন খান, সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন ঢালী, শিক্ষক কাওসার আহমেদ, এসএম বিজয়, আল মামুন , তরিকুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন ও এমপিও-বহির্ভূত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ও হতাশ হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, “আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। অথচ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিশুদের বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।”

তারা বলেন, দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের একটি বড় অংশ দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আশায় এগিয়ে এসেছে। এখন এই সিদ্ধান্ত তাদের স্বপ্ন ও শ্রমের প্রতি অবিচার।

বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে এই প্রজ্ঞাপন সেই প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। তারা প্রশ্ন তোলেন, “ই আই আই এন নম্বরধারী নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়, তবে কেন নিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না?”

বক্তারা আরও বলেন ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোরা হবে।

মানববন্ধন ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি নেজাম উদ্দিন শাহীন, ২নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি জাকির উল্লাহ সুজুন, ৩নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: আজহারুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: শামীম, ৬নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: জাবের হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড  প্রতিনিধি মো: আল আমিন, ১০ নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি এড: মো: খোরশেদ আলম প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুর পথরেখা ও সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
  • জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
  • সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসায় কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
  • না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন : হুশিয়ারী
  • অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ববিতে মানববন্ধন
  • সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মিছিল-সমাবেশ
  • নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন