ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হতাহত
Published: 6th, April 2025 GMT
গাজায় দিনরাত সমানে চলছে ইসরায়েলের বর্বর বোমা হামলা। ধ্বংসযজ্ঞ আর নিরীহ নারী-শিশুর আর্তনাদে ভারি ফিলিস্তিনি উপত্যকাটি। মা-বাবার কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শিশুদের। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু হতাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেড় বছর ধরে চলা দখলদার দেশটির আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১৯ হাজার শিশু। মা-বাবা হারানো শিশুর সংখ্যা ৩৯ হাজার। নির্বিচারে শিশুদের হত্যার জন্য ইসরায়েল ও দেশটির নেতাদের বিচারের দাবি জানিয়েছে হামাস। ৫ এপ্রিল ফিলিস্তিনের শিশু দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গত ১৮ মার্চ নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু হতাহত হচ্ছে। এটি সাধারণ মানবতার ওপর কলঙ্ক। শিশুদের তৈরি নয় এমন একটি যুদ্ধে তাদের জীবন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশুদের ওপর। প্রতিদিন হতাহতের সংখ্যা যে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়।
গত ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয়। এরপর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় সব মানবিক সাহায্যের ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেন। দুই সপ্তাহ পর ইসরায়েল উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে।
ফিলিপ লাজারিনি বলেন, পুনরায় হামলা শুরু হওয়ায় তাদের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিশুদের জন্য কোনো জায়গা নেই– এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদেরকে হত্যা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
গাজা সিটির আল-আহলি হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৬২ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ৬৬৯ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ২২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হন।
গত কয়েক সপ্তাহে গাজাজুড়ে মানবিক পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া থাকতে হবে নিয়মিত আয়ের উৎস। আর বিনিয়োগের ৬ মাসের আগে ঋণ পাবে না কোনো বিনিয়োগকারী। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানির হিসাবেও মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত মার্জিন ঋণ নীতিমালায় এসব সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ প্রসঙ্গে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এবং পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলেন, পুঁজিবাজার অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে টাস্কফোর্স। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ৩ মাসের আগে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে, মার্জিন নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধ হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে সুশাসন না থাকায় বিপুল অংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীর পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মার্জিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা টাস্কফোর্সের মূল্য উদ্দেশ্য।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে বসা হয়নি। অথচ আমরা দেখলাম তাদের সাথে আমরা ৩ বারও বসে ফেলেছি। তবে কেন এরকম মিস কমিউনিকেশন। আমরা অংশীজনদের বাহিরেও যারা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের সাথেও আমরা বসেছি। এরপরেও যদি মনে হয় আমরা কিছু বাদ দিয়েছি বা গ্যাপ ছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানালে তা আমরা যুক্ত করে দিব। তবে অংশীজনদের থেকে বেশি আমরা সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে। যার কারণ বাজার অচল অবস্থায় চলে গেছে। সে অবস্থাটাকে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করেছি, এর অন্যতম কারণ হলো মার্জিন রুলস। কারণ মার্জিন রুলসটা যদি প্ল্যান করে দেওয়া হতো, গভর্নেন্সটা যদি সঠিক থাকতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা তৈরি নাও হতে পারতো। তাই মার্জিন রুলসকে আমরা টপ প্রায়োরিটি আইটেম ধরেছি। পৃথিবীতে মার্জিন রুলসকে শর্টটার্ম ওয়ে হিসেবে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ১:৩/৪ রেশিওতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হচ্ছে৷ এগুলা কিভাবে হয়েছে? এরপর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্রিয়েট হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই জিনিসগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি বাজারে না হয়। মার্জিন নিয়ে আর গ্যামব্লিং করা যাবেনা। মার্জিন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এতো পরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি না থাকলে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি হতো না।
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে ফোকাস গ্রুপ। মূল কাজ করেছে টাস্কফোর্স। আমরা কাজ করতে যেয়ে পাবলিকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকেও পেয়েছি, তবে পাবলিক থেকে পরামর্শ বেশি এসেছে। এটা খুব ভালো বিষয়। কারণ যত বেশি পরামর্শ আসবে, আমরা তত বেশি রিফাইন করার সুযোগ পাব।
সংবাদ সম্মেলনে একটি উপস্থাপনায় পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমার খুবই ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে আইনি ফরমেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে ব্রেইন স্টর্মিং ড্রাফটিং হয়েছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে। এ মার্কেটে যারা কাজ করেন, তাদের আইডিয়াগুলো নিয়েই ড্রাফট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির ওয়ার্কিং টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এছাড়া মার্কেটের বড় বড় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছি।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ