এবার পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকরা চমক দেখিয়েছেন, ফলে ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কিন্তু কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। পেঁয়াজ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হলেও আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, পেঁয়াজ সংরক্ষণে গড়ে তোলা হবে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিন (বাতাস প্রবাহ যন্ত্র) সংযুক্ত বিশেষ সংরক্ষণাগার। প্রাথমিকভাবে পেঁয়াজ অধ্যুষিত এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে ৪ হাজার এয়ার-ফ্লো মেশিন স্থাপন করা হবে।
ঈদের ছুটিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ বিষয়ক কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক ভার্চুয়াল সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় জানান, কিছু এলাকায় কৃষকের নিজস্ব উদ্যোগ ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এয়ার-ফ্লো মেশিন ব্যবহার হচ্ছে। এতে সুফল মিলছে। এয়ার-ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজের পচন ঠেকিয়ে আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যাবে বলে মত প্রকাশ করেন তারা। 

কৃষি সচিব ড.

মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এয়ার-ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে সারাদেশে প্রণোদনা হিসেবে ৪ হাজার মেশিন বসাব। পরবর্তী সময়ে আরও মেশিন বসাব। পেঁয়াজের পচন রোধে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিনের এই প্রযুক্তি কার্যকর হলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষিরা সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন। তা সম্ভব হলে আমরা নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে পারব। আমদানির জন্য আর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে না। এ ছাড়া কৃষকের লোকসান ঠেকাতে পেঁয়াজ আমদানিকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। 
তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সারাদেশে কিছু মডেল ঘর আছে। আমরা সেসব ঘরে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করে সংরক্ষণে রাখব। পরে সেটি বাজারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করব। এ ছাড়া চাষিদের লোকসান কমাতে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতেও পেঁয়াজ দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। এতে ভোক্তাও লাভবান হবেন, চাষিরাও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। 

ফরিদপুর সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের আব্দুর রহিম শেখ দীর্ঘদিন ধরে এয়ার-ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। আব্দুর রহিম শেখ বলেন, ১৫-১৬ হাজার টাকার এই যন্ত্র দিয়ে তিনি প্রায় তিনশ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারছেন, যাতে মাসে বিদ্যুৎ খরচ আসছে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা।
নতুন এ পদ্ধতিতে ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর ছিদ্রযুক্ত মাদুর বিছানো হয়। ঘরের মাঝামাঝি রাখা হয় একটি ভার্টিক্যাল সিলিন্ডার। সিলিন্ডারের ভেতর থাকে বৈদ্যুতিক পাখা। পাখার সাহায্যে ওপর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বাতাস প্রবাহিত হয় মজুতকৃত পেঁয়াজের মধ্য দিয়ে। বছরে আট মাস এভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ