সিনেমার গল্প লেখার প্রয়োজনে বাঙালির বিখ্যাত চরিত্র অপু কিংবা ফেলুদা অবয়ব মাথায় ভেবে দিব্যি তার মুখাবয়বের ছবি এঁকে ফেলতেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ভাবনা থেকেই তৈরি হয়ে যেত কাস্টিং। কার্টুন ভাবনা থেকে সিনেমার পর্দায় চরিত্র বিনির্মাণে সেকালে একতরফা নাম কুড়িয়েছেন সত্যজিৎ রায়। অনেক বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যেন তারই পুনরাবৃত্তি করল জিবলি। গবেষণা রিপোর্ট বলছে, জিবলির কারণে প্রথমবার চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক গড় সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ১৫ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে। ওপেনএআইর নির্বাহী প্রধান স্যাম অল্টম্যান জানালেন, ঘণ্টার ব্যবধানে ১০ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। বছর দুই আগে আত্মপ্রকাশের পর সমান সংখ্যক গ্রাহক নিবন্ধিত হতে সময় লেগেছিল পাঁচ দিন। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জিবলি’ ছড়িয়েছে উন্মাদনার ঝড়। কমবেশি সবাই বুঁদ হয়েছেন নিজের আর্ট (অ্যানিমেটেড) ছবি নির্মাণে। নিজের নির্বাচিত ছবি দিয়ে চ্যাটজিপিটিকে নির্দেশ দিলেই সে ঠিক আপনার মতো হুবহু অ্যানিমেটেড ছবি বানিয়ে দেবে।
ওপেনএআই উদ্ভাবিত চ্যাটজিপিটির বিশেষ ফিচারের কারণে এমনটি ঘটছে। কিন্তু এমন ফিচারের মাধ্যমে অজান্তেই কি নিজের মুখাবয়বের অপব্যবহার ঘটার ঝুঁকি বাড়ছে– শঙ্কা ঠিক যেন সেখানেই। নিজের ছবি তো আছেই, অনেকে এখন নিয়মিত পারিবারিক ফ্রেমের ছবি তৈরির ফরমায়েশ করছেন জিবলির কাছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অনেকে বলছেন, স্মার্টফোন আনলক করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে বন্ধুদের ট্যাগ করা বা ক্যামেরা অ্যাপ খোলার আগে অনুমতি দিতে এআই ঘরানার সব সংস্থার কাছে ‘ফেসিয়াল ডেটা’ নথিবদ্ধ হয়ে যায়। সব সংস্থা শুধু এসব ডেটা প্রসেসই করে না, স্ক্যান করে সংরক্ষণ করে। এমনকি কারও মুখের সূক্ষ্ম সব দাগ এআইর নজর এড়িয়ে যায় না।
অন্যদিকে, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর বেহাত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে ফেসিয়াল ডায়মেনশনের কারণে। যে কোনোভাবে একবার খোয়া গেলে তা এআই প্রযুক্তির হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা কার্যত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। জানা গেছে, গুগল ও মেটার বিরুদ্ধে নিজেদের এআই প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাহকের ‘ফেসিয়াল ডেটা’ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ‘জিবলি’ তৈরি করলে কীভাবে ফেসিয়াল ডায়মেনশনের তথ্য বেহাত হয়। তাই বায়োমেট্রিক মুখাবয়ব থেকে ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল জানা প্রয়োজন।
নিরাপত্তায় যা করবেন
প্রচলিত এআই পরিচালিত সব ধরনের প্ল্যাটফর্মে নিজের এইচডি ছবি আপলোড করা থেকে বিরত থাকবেন।
মুখাবয়ব (ফেস) আনলক সিস্টেমের পরিবর্তে ডিভাইসে পাসওয়ার্ড বা পিন পদ্ধতি ব্যবহার করা শ্রেয়। পরিচিত বা অপরিচিত যে কোনো অ্যাপে হুট করে ক্যামেরা ব্যবহারে অনুমতি না দেওয়া।
জিবলি স্টাইল
ওপেনএআই প্রযুক্তি ছবির নতুন ফিচার উন্মোচন করেছে। জিপিটি-৪ও মডেলের ইমেজ জেনারেশন ফিচারটি রাতারাতি ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জনপ্রিয় সব সিনেমার একের পর এক আইকনিক ছবি থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্যক্তির অবয়ব অ্যানিমেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে বিশেষ ফিচার, যার নাম ‘জিবলি স্টাইল’। প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে হায়ায়ো মিয়াজাকি, ইসাও তাকাহাটা ও তোশিও সুজুকি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘স্টুডিও জিবলি’। ক্রমান্বয়ে তা জাপানের জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিও হয়ে ওঠে। ছবির খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গল্পের আঙ্গিকে প্রতিটি ছবি দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হতো বিশেষ স্টুডিওতে।
জিবলি মূলত আরবি শব্দ, যার অর্থ মরুঝড়। জিবলি স্টুডিওর সব ছবির অনুকরণেই চ্যাটজিপিটির নতুন ফিচার উদ্ভাবন। প্যাস্টেল আর ফিকে রঙের ক্যানভাস ব্যবহৃত হয় জিবলি আর্টে। কার্টুন অবয়বে অ্যানিমেশন যারা পছন্দ করেন, রাতারাতি তাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উল্লিখিত ফিচার।
বিখ্যাত ব্যক্তি বা আইকনিক দৃশ্যের ছবি জিবলি স্টাইলে কনভার্ট করে রাতারাতি ট্রেন্ড তৈরি করে ফেলেছে চ্যাটজিপিটি। জিবলি স্টাইল ঝড় এখন সবখানে দৃশ্যমান।
জিবলি তৈরি
আপাতত জিবলি তৈরিতে খরচ গুনতে হবে না। আগ্রহীরা এখন সহজে জিবলি স্টাইলে ছবি তৈরি করতে পারছেন।
প্রথমে নিজের চ্যাটজিপিটি অংশে যেতে হবে। তারপর ওপেনএআই ডটকমে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে নতুন চ্যাট উইন্ডো খুলে যাবে। লগইন করলেই ‘নিউ চ্যাট’ অপশনে ক্লিক করে নতুন কথোপকথন অংশে প্রম্পট লিখতে হবে। নিজের বিশেষায়িত ছবির প্রয়োজনে ইমেজ প্রম্পট লিখতে হবে। যে ছবিটি তৈরি করতে চাইছেন, তার জন্য বিস্তারিত প্রম্পট টাইপ করতে হবে। তারপর এন্টার দিলেই চ্যাটজিপিটির নির্দেশিকা পাওয়ার পর জিবলি স্টাইলে ছবি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। ব্যস, ডাউনলোড করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। ছবি দৃশ্যমান হলে রাইট ক্লিক করে ‘সেভ ইমেজ অ্যাজ’ নির্বাচন করে ডাউনলোড করা যাবে ছবিটি।
জিবলি নেপথ্যে
চ্যাটজিপিটির নেটিভ ইমেজ জেনারেটর আগ্রহীকে সহজ টেক্সট প্রম্পটে তার নিজস্ব এআই জেনারেটেড ছবি তৈরি করতে দেয়। নির্বাচিত ছবি আপলোড করে তার কিছুটা বিবরণ দিলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজস্ব এআই উদ্ভাবিত ছবি দৃশ্যমান হয়। চ্যাটজিপিটি প্লাস, প্রো বা টিম সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে এআই জেনারেটেড ছবি পাওয়া সম্ভব। জিবলি উন্মাদনায় এখন সবাই ডুবছেন। ইতোমধ্যে বদল হতে শুরু করেছে অনেকের ফেসবুক প্রোফাইল ও কাভার ছবি। সব ছবিই দ্রুত ফরওয়ার্ড হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) রূপান্তরিত ছবির উন্মাদনা প্রমাণ করে, সামনের সময়ে এমন প্রযুক্তি সমাজ-সভ্যতাকে কোথায় পৌঁছে দেবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র গ র হক এআই প
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’