Samakal:
2025-09-18@04:52:42 GMT

জিবলি যেন উন্মাদনা!

Published: 6th, April 2025 GMT

জিবলি যেন উন্মাদনা!

সিনেমার গল্প লেখার প্রয়োজনে বাঙালির বিখ্যাত চরিত্র অপু কিংবা ফেলুদা অবয়ব মাথায় ভেবে দিব্যি তার মুখাবয়বের ছবি এঁকে ফেলতেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ভাবনা থেকেই তৈরি হয়ে যেত কাস্টিং। কার্টুন ভাবনা থেকে সিনেমার পর্দায় চরিত্র বিনির্মাণে সেকালে একতরফা নাম কুড়িয়েছেন সত্যজিৎ রায়। অনেক বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যেন তারই পুনরাবৃত্তি করল জিবলি। গবেষণা রিপোর্ট বলছে, জিবলির কারণে প্রথমবার চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক গড় সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ১৫ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে। ওপেনএআইর নির্বাহী প্রধান স্যাম অল্টম্যান জানালেন, ঘণ্টার ব্যবধানে ১০ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। বছর দুই আগে আত্মপ্রকাশের পর সমান সংখ্যক গ্রাহক নিবন্ধিত হতে সময় লেগেছিল পাঁচ দিন। লিখেছেন সাব্বিন হাসান

সারাবিশ্বে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জিবলি’ ছড়িয়েছে উন্মাদনার ঝড়। কমবেশি সবাই বুঁদ হয়েছেন নিজের আর্ট (অ্যানিমেটেড) ছবি নির্মাণে। নিজের নির্বাচিত ছবি দিয়ে চ্যাটজিপিটিকে নির্দেশ দিলেই সে ঠিক আপনার মতো হুবহু অ্যানিমেটেড ছবি বানিয়ে দেবে।

ওপেনএআই উদ্ভাবিত চ্যাটজিপিটির বিশেষ ফিচারের কারণে এমনটি ঘটছে। কিন্তু এমন ফিচারের মাধ্যমে অজান্তেই কি নিজের মুখাবয়বের অপব্যবহার ঘটার ঝুঁকি বাড়ছে– শঙ্কা ঠিক যেন সেখানেই। নিজের ছবি তো আছেই, অনেকে এখন নিয়মিত পারিবারিক ফ্রেমের ছবি তৈরির ফরমায়েশ করছেন জিবলির কাছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অনেকে বলছেন, স্মার্টফোন আনলক করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে বন্ধুদের ট্যাগ করা বা ক্যামেরা অ্যাপ খোলার আগে অনুমতি দিতে এআই ঘরানার সব সংস্থার কাছে ‘ফেসিয়াল ডেটা’ নথিবদ্ধ হয়ে যায়। সব সংস্থা শুধু এসব ডেটা প্রসেসই করে না, স্ক্যান করে সংরক্ষণ করে। এমনকি কারও মুখের সূক্ষ্ম সব দাগ এআইর নজর এড়িয়ে যায় না।
অন্যদিকে, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর বেহাত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে ফেসিয়াল ডায়মেনশনের কারণে। যে কোনোভাবে একবার খোয়া গেলে তা এআই প্রযুক্তির হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা কার্যত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। জানা গেছে, গুগল ও মেটার বিরুদ্ধে নিজেদের এআই প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাহকের ‘ফেসিয়াল ডেটা’ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ‘জিবলি’ তৈরি করলে কীভাবে ফেসিয়াল ডায়মেনশনের তথ্য বেহাত হয়। তাই বায়োমেট্রিক মুখাবয়ব থেকে ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল জানা প্রয়োজন।

নিরাপত্তায় যা করবেন
প্রচলিত এআই পরিচালিত সব ধরনের প্ল্যাটফর্মে নিজের এইচডি ছবি আপলোড করা থেকে বিরত থাকবেন।
মুখাবয়ব (ফেস) আনলক সিস্টেমের পরিবর্তে ডিভাইসে পাসওয়ার্ড বা পিন পদ্ধতি ব্যবহার করা শ্রেয়। পরিচিত বা অপরিচিত যে কোনো অ্যাপে হুট করে ক্যামেরা ব্যবহারে অনুমতি না দেওয়া।

জিবলি স্টাইল
ওপেনএআই প্রযুক্তি ছবির নতুন ফিচার উন্মোচন করেছে। জিপিটি-৪ও মডেলের ইমেজ জেনারেশন ফিচারটি রাতারাতি ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জনপ্রিয় সব সিনেমার একের পর এক আইকনিক ছবি থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্যক্তির অবয়ব অ্যানিমেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে বিশেষ ফিচার, যার নাম ‘জিবলি স্টাইল’। প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে হায়ায়ো মিয়াজাকি, ইসাও তাকাহাটা ও তোশিও সুজুকি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘স্টুডিও জিবলি’। ক্রমান্বয়ে তা জাপানের জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিও হয়ে ওঠে। ছবির খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গল্পের আঙ্গিকে প্রতিটি ছবি দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হতো বিশেষ স্টুডিওতে।
জিবলি মূলত আরবি শব্দ, যার অর্থ মরুঝড়। জিবলি স্টুডিওর সব ছবির অনুকরণেই চ্যাটজিপিটির নতুন ফিচার উদ্ভাবন। প্যাস্টেল আর ফিকে রঙের ক্যানভাস ব্যবহৃত হয় জিবলি আর্টে। কার্টুন অবয়বে অ্যানিমেশন যারা পছন্দ করেন, রাতারাতি তাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উল্লিখিত ফিচার।
বিখ্যাত ব্যক্তি বা আইকনিক দৃশ্যের ছবি জিবলি স্টাইলে কনভার্ট করে রাতারাতি ট্রেন্ড তৈরি করে ফেলেছে চ্যাটজিপিটি। জিবলি স্টাইল ঝড় এখন সবখানে দৃশ্যমান।

জিবলি তৈরি
আপাতত জিবলি তৈরিতে খরচ গুনতে হবে না। আগ্রহীরা এখন সহজে জিবলি স্টাইলে ছবি তৈরি করতে পারছেন।
প্রথমে নিজের চ্যাটজিপিটি অংশে যেতে হবে। তারপর ওপেনএআই ডটকমে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে নতুন চ্যাট উইন্ডো খুলে যাবে। লগইন করলেই ‘নিউ চ্যাট’ অপশনে ক্লিক করে নতুন কথোপকথন অংশে প্রম্পট লিখতে হবে। নিজের বিশেষায়িত ছবির প্রয়োজনে ইমেজ প্রম্পট লিখতে হবে। যে ছবিটি তৈরি করতে চাইছেন, তার জন্য বিস্তারিত প্রম্পট টাইপ করতে হবে। তারপর এন্টার দিলেই চ্যাটজিপিটির নির্দেশিকা পাওয়ার পর জিবলি স্টাইলে ছবি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। ব্যস, ডাউনলোড করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। ছবি দৃশ্যমান হলে রাইট ক্লিক করে ‘সেভ ইমেজ অ্যাজ’ নির্বাচন করে ডাউনলোড করা যাবে ছবিটি।

জিবলি নেপথ্যে
চ্যাটজিপিটির নেটিভ ইমেজ জেনারেটর আগ্রহীকে সহজ টেক্সট প্রম্পটে তার নিজস্ব এআই জেনারেটেড ছবি তৈরি করতে দেয়। নির্বাচিত ছবি আপলোড করে তার কিছুটা বিবরণ দিলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজস্ব এআই উদ্ভাবিত ছবি দৃশ্যমান হয়। চ্যাটজিপিটি প্লাস, প্রো বা টিম সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে এআই জেনারেটেড ছবি পাওয়া সম্ভব। জিবলি উন্মাদনায় এখন সবাই ডুবছেন। ইতোমধ্যে বদল হতে শুরু করেছে অনেকের ফেসবুক প্রোফাইল ও কাভার ছবি। সব ছবিই দ্রুত ফরওয়ার্ড হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) রূপান্তরিত ছবির উন্মাদনা প্রমাণ করে, সামনের সময়ে এমন প্রযুক্তি সমাজ-সভ্যতাকে কোথায় পৌঁছে দেবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র গ র হক এআই প

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ