বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের সর্বনিম্নে
Published: 7th, April 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আজ সোমবার তেলের দামে ধস নেমেছে। খবর সিএনএনের।
বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৩ দশমিক ৩০ ডলারে লেনদেন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানদণ্ড ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলও ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৫৯ দশমিক ৮৪ ডলারে নেমে এসেছে। দুটি তেলই এখন এমন এক দামে লেনদেন হচ্ছে যা ২০২১ সালের শুরু থেকে দেখা যায়নি। যখন বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়াই করছিল তখন তেলের দাম কমেছিল।
তেলের এই দামপতনের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদকদের জোট ওপেক প্লাস গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়ে পূর্বঘোষিত পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বড় পরিমাণে তেল সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সৌদি আরব, রাশিয়া এবং ওই জোটের আরও ছয়টি সদস্য দেশ মে মাস থেকে পূর্বঘোষিত তুলনায় অনেক বেশি তেল উৎপাদন বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং চীনের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আরোপিত উচ্চ শুল্কের জেরে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে শুরু হওয়া ধস আরও গভীর হয়েছে। সোমবার এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোতে বড় ধরনের পতন হয়েছে। জাপানের বেঞ্চমার্ক নিকেই ২২৫ সূচক ৭ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। আর বৃহত্তর টপিক্স সূচক পড়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
সোমবার দিনের শুরুতেই ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোতেও পতন লক্ষ্য করা যায়, তবে তা এশিয়ার তুলনায় কিছুটা কম। জার্মানির ডিএএক্স সূচক ৯ শতাংশ এবং লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।
মার্কিন ও বৈশ্বিক শেয়ারবাজার যখন ধসে পড়ছে, তখন ট্রাম্প বলেন, তিনি চান না ‘কিছুই নিচে নেমে যাক’। তবে জোর দিয়ে বলেন ‘কখনো কখনো কিছু ঠিক করতে ওষুধ খেতেই হয়।’
অন্যদিকে ট্রাম্প নতুন করে ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের পর থেকে ৫০টিরও বেশি দেশ বাণিজ্য আলোচনা শুরু করার জন্য হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ