রাজবাড়ী আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির সঙ্গে জেলা জামায়াত আমিরের করমর্দন
Published: 7th, April 2025 GMT
রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে আদালতের বারান্দায় করমর্দন করেছেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. নুরুল ইসলাম। তাঁদের করমর্দনের ছবি নিয়ে ফেসবুকে চলছে নানা আলোচনা। তবে করমর্দনের বিষয়টিকে ‘সৌজন্যতা’ হিসেবে দেখছেন জামায়াতের এই নেতা।
গতকাল রোববার গভীর রাতে কাজী কেরামত আলীকে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আজ সোমবার সকালে তাঁকে রাজবাড়ী নিয়ে আসা হয়। রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো.
এর আগে সাবেক এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে আদালতে নেওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের কড়া পাহারায় তাঁকে দ্রুত আদালতে নেওয়া হয়।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত ৩০ আগস্ট কাজী কেরামত আলীসহ ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করেন রাজীব মোল্লা নামের এক শিক্ষার্থী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় কাজী কেরামতকে কারাগারে পাঠানো হয়।
দুপুরে জেলা কারাগারে নেওয়ার পথে আদালতের বারান্দায় জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে দেখা হয় জামায়াতের নেতা মো. নুরুল ইসলামের। এ সময় তাঁরা করমর্দন করে। তাঁদের এই করমর্দনের ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এ নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
সিরাজুল ইসলাম নামের একজনের মন্তব্য, ‘হাত মেলানো মানেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাওয়া না। অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম একজন ভদ্রলোক। তাই সৌজন্যের খাতিরে হাত মেলাচ্ছেন। তবে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
আর শরিফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘খুনি হাসিনার দোসর, বালুখোর, ভোট চোরের সঙ্গে হাত মিলানো। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মামলাসংক্রান্ত কাজেই আদালত চত্বরে ছিলাম। এমন সময় সামনাসামনি সাবেক এমপি কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তিনি আমাকে দেখে হাত এগিয়ে দিলে সৌজন্যতা দেখাতে আমিও হাত এগিয়ে দিই। এখানে দোষের তো কিছু দেখছি না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।