ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরব দেশগুলোর কার কী অবস্থান
Published: 9th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনিদের দাবিগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করে আরব দেশগুলো। তবে নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ও গোষ্ঠীগত উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে দেশগুলোর সম্পর্ক জটিল করে তুলেছে। এতে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক ও সামরিক সংকট।
জর্ডান১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় অন্তত ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে পালিয়েছিলেন বা তাঁদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তখন বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিয়েছিল জর্ডান। এ ছাড়া ১৯৬৭ সালের আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েল জয় পাওয়ার পর ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) জর্ডানে আশ্রয় নেয়।
জর্ডান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ইসায়েলে হামলা চালাত পিএলও। দেশটির তৎকালীন বাদশাহ হুসাইনকেও হুমকি দিয়েছিল তারা। ১৯৭০ সালে বাদশাহর মোটর শোভাযাত্রায় এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বন্দুকধারীরা। তবে বেঁচে যান বাদশাহ। পরে তিনি পাল্টা আঘাত করেন এবং গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। তখন হাজার হাজার মানুষ নিহত হন এবং ফিলিস্তিনিদের লেবাননের রাজধানী বৈরুতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একটি শান্তিচুক্তিতে সই করে জর্ডান। এর আগে একটি দেশই কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিল। সেটি ছিল মিসর।
আঞ্চলিকভাবে ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দেশটি আব্রাহাম অ্যাকর্ডের (চুক্তি) মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।লেবাননপিএলও জর্ডান থেকে লেবাননে চলে আসার পর ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত দেশটি বহুমুখী গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েল, সিরিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলার নিয়মিত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন শরণার্থীশিবির। এককালে মধ্যপ্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে খ্যাত লেবাননের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই করছিল ওই গোষ্ঠীগুলো।
লেবাননে ওই সংঘাত চলেছিল ১৫ বছর ধরে। সে সময় সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাগুলোর একটি ছিল—লেবাননের খ্রিষ্টান সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সাবরা ও শাতিলা শরণার্থীশিবিরে অন্তত ৮০০ বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা। ওই গোষ্ঠীটির সমর্থন ও অর্থ দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে ফিলিস্তিনিদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় নিহত হন কয়েক হাজার মানুষ।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে বরাবরই সোচ্চার লেবানন সরকার। তবে তাঁদের নাগরিক অধিকার দিতে নারাজ। এ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখেও পড়েছে দেশটি। লেবানন সরকারের ভাষ্য, তাদের এই নীতির লক্ষ্য হলো—শরণার্থী ফিলিস্তিনিরা যেন লেবাননে স্থায়ী না হয় এবং নিজেদের জন্মভূমিতে ফেরত যেতে পারে।
১৯৪৮ সালে জায়নবাদীদের হামলার পর একদল ফিলিস্তিনি গ্যালিলের একটি গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ব নন র ইসর য় ল শরণ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।