যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ভোট নিয়ে চিন্তা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে যুদ্ধের সময়ে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতারা চান ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সরানো হোক। ট্রাম্প ও পুতিন দু’জনই জেলেনস্কির ক্ষমতায় থাকাকে অপছন্দ করেন। 

গতকাল মঙ্গলবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প দাবি করেন ইউক্রেনের নেতা জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা চার শতাংশে নেমে গেছে। পাঁচ দিন পরে পুতিনও এ বিষয়ে কথা বলেন। রুশ প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় দ্বিগুণ কমে গেছে। 

পরে দেখা যায় ট্রাম্প ও পুতিনের অনুমান ভুল ছিল। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির জরিপ অনুসারে, জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের কূটনৈতিক বিরোধের ফলে তাঁর অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে ছিল ৫২ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ শতাংশে উঠে আসে। 

পুতিন চান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইউক্রেনের বর্তমান রাষ্ট্রদূত জালুঝনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হোক। বর্তমানে জেলেনস্কির চেয়ে তিনি জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। সাবেক এই জেনারেলের ৬২ শতাংশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। গত সপ্তাহে জালুঝনি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় আমাদের সবার দায়িত্ব দেশকে বাঁচানো, নির্বাচনের কথা ভাবা উচিত নয়।’ 

তবে ইউক্রেনের বাতকিভশচিনা (পিতৃভূমি) রাজনৈতিক দলের প্রধান টিমোশেঙ্কো ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে কেবল ইউক্রেনে নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচন করতে হলে সামরিক আইন তুলে নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে জেলেনস্কি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, তাঁর সেনারা রাশিয়ার বেলগোরোড অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এলাকাটি ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী। তিনি সোমবার বলেন, ‘আমরা শত্রু অঞ্চলে সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।’ রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের একটি ছোট এলাকা দখলে রাখার কথাও তিনি জানান। সোমবার রাতে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, যা ঘটছে তাতে তিনি খুশি নন। রাশিয়াকে পাগলের মতো বোমাবর্ষণ করছে। 

অন্যদিকে টেলিগ্রামকে ৮০ হাজার ডলার জরিমানা করেছেন রাশিয়ার আদালত। দেশটির সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, রাশিয়ার সরকার উৎখাত করতে বিরোধীদের আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নিতে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর সহায়তায় রেলওয়ে পরিবহন লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল কিছু টেলিগ্রাম চ্যানেল।

অপরদিকে রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষেবার নির্দেশে একজন ইউক্রেনীয় সেনা সদস্যকে হত্যা ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানিয়েছে কিয়েভ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ