দশ মাস আগে জাপানপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়। দু’মাস পরই স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। প্রবাসে সোনার সংসার গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর নববধূর জীবন তছনছ করে দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে বানানো একটি ভুয়া ভিডিও। ওই রমণী বেছে নেন আত্মহননের পথ। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে সুলতানা পারভীনের জীবনে। গত রোববার দুপুরে বাবার বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আত্মহত্যার পর  এমনটাই দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

 এদিকে মৃত্যুর আগে লিখে যান তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। স্বামী অনিকের বোন জামাই পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ মৃদুলকে দায়ী করে সুলতানা লেখেন, ‘মৃদুলকে ছেড়ে দিও না, ওর জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। ওকে ছেড়ে দিও না। আমার সংসার, অনিক, কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারলাম না।’  

গতকাল মঙ্গলবার সুলতানাদের বাড়ি গেলে দেখা যায়, মা ফিরোজা বেগম বাকরুদ্ধ। কোস্টগার্ডে কর্মরত একমাত্র ভাই আলিমুল ইসলাম আহাজারি করছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করছি। অথচ আমার পরিবারে নিরাপত্তা নেই। ওরা সবাই মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছে। দিনের পর দিন মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ফেক আইডি থেকে অনিকের পর্তুগালপ্রবাসী বোন জামাই মৃদুল আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটি প্রথমে সুলতানাকে, পরে তাঁর স্বামী অনিককে পাঠানো হয়। এই ভিডিওর কারণে শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি। অনিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকি ডির্ভোস দেবেন বলেও হুমকি দেন। পরে জানা যায়, ভিডিও এআই দিয়ে তৈরি।
 
মা ফিরোজা বেগম বলেন, সবাই মিলে মেয়েটাকে হত্যা করেছে। অনিক, অনিকের মা, বোন জামাই মৃদুলের ফাঁসি চান তিনি। দু’এক দিনের মধ্যে থানায় মামলা করব। 
জাপানপ্রবাসী অনিকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ভগ্নিপতি মৃদুলের সঙ্গে আমার স্ত্রীর বচসা হয়। সুলতানা কীভাবে সংসার করে, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় মৃদুল। তার কারণে আমাদের সংসারে অশান্তি হয়। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সুলতানা। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি। 

এ বিষয়ে কথা বলতে পর্তুগালপ্রবাসী মৃদুলের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কল রিসিভ করেননি। তাঁকে মেসেজ পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি। 

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আকবর জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নববধ র ল শ এআই অন ক র প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের  নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।” 

ঢাকা/শরিফুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ