চালকল মালিক সমিতির সভাপতির বাড়িতে গুলি
Published: 10th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের কুষ্টিয়ার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের গোশালা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় আবদুর রশিদ শহরের খাজানগর এলাকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। ওই এলাকায় তাঁর বড় কয়েকটি চালকল রয়েছে।
এ ঘটনার পর পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা গুলির খোসা জব্দ করে নিয়ে যান। দিনদুপুরে লোকজনের মধ্যে এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র জানায়, গোশালা সড়কের প্রবেশমুখে কয়েকটি বাড়ির পরই রশিদের অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িটির এখনও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে দোতলায় তিনি পরিবার নিয়ে বাস করছেন। ঘটনার সময় বাড়িতে রশিদের স্ত্রী-সন্তান ছিলেন।
গুলির ঘটনার পর আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ভাতিজা সম্প্রতি সদর উপজেলার একটি গরুর হাটের ইজারা পেয়েছেন। সেই ইজারা প্রত্যাহারের জন্য বিএনপির এক নেতা বিপ্লব চরমপন্থি সংগঠনের নেতাদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে মোবাইল ফোনে তাঁকে এবং ভাতিজাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
আবদুল রশিদের ছেলে শাহরিয়ার রশিদ জানান, দুপুরের দিকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান। নিচ থেকে বাড়ির দারোয়ান গুলি ছোড়ার বিষয়টি জানায়। পরে দেখা যায়, তৃতীয় তলার কাচ ভেদ করে গুলি ভেতরে চলে গেছে। কাচের টুকরো নিচে ও আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে।
বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি আসেন। তাদের দু’জন মাস্ক ও হেলমেট পরা ছিলেন। বাড়ির সামনে দাঁড়ানোর অন্তত ১০ সেকেন্ড পর পেছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এর পর শহরের দিকে চলে যান। এই সময়ে সড়কে মানুষ চলাচলও করছিল।
আবদুর রশিদ জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চাল ব্যবসার পাশাপাশি হাটবাজার ইজারা নেওয়ার ব্যবসা করেন। কয়েক দিন আগে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা গরুর হাটের ইজারা পান তাঁর ভাতিজা জিহাদুজ্জামান জিকু। দরপত্র কেনার পর থেকেই একটি চরমপন্থি সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ইজারাপত্র জমা না দিতে হুমকি দিয়ে আসছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চরমপন্থি নেতা স্বপন ঠাকুর পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব ও মুন্না নামে দু’জন এই হাট পরিচালনা করবে। এ জন্য ইজারা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। না হলে মেরে ফেলা হবে।
হুমকি পাওয়ার পর থেকে রশিদের ভাতিজা খাজানগর এলাকার গোল্ডেন অটো রাইস মিলের মালিক জিকু আত্মগোপনে রয়েছেন। জিকু বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদকও।
জিকু মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একটি হাট ইজারা পেয়েছিলাম। হাটের দরপত্রে অংশ না নিতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে হাট ইজারা পাওয়ার পর হুমকি বেড়ে যায়। এই হুমকির সঙ্গে চরমপন্থি ও বিএনপির দলীয় কয়েকজন লোক জড়িত। নেপথ্যে থেকে বিএনপি নেতা বিপ্লবও এ কাজ করছে বলে ধারণা করছি।’
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ‘রশিদদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে তদন্ত করতে পারে। এই মৌসুমেও হাটের দরপত্র কিনেছিলাম। চরমপন্থিরা আমাকেও অংশ না নিতে হুমকি দিয়েছিল। এ জন্য আর এগোইনি। আমি বিএনপির রাজনীতি করি। হেয় করতে আমার নাম এখানে আনা হচ্ছে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘যে বা যারা পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়েছে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। যাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, কেউ তো ফাঁসানোর জন্যও করতে পারে।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চরমপন থ ব এনপ র ন র পর এ ঘটন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।