বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের কুষ্টিয়ার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের গোশালা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় আবদুর রশিদ শহরের খাজানগর এলাকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। ওই এলাকায় তাঁর বড় কয়েকটি চালকল রয়েছে।

এ ঘটনার পর পুলিশ ও র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা গুলির খোসা জব্দ করে নিয়ে যান। দিনদুপুরে লোকজনের মধ্যে এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র জানায়, গোশালা সড়কের প্রবেশমুখে কয়েকটি বাড়ির পরই রশিদের অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িটির এখনও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে দোতলায় তিনি পরিবার নিয়ে বাস করছেন। ঘটনার সময় বাড়িতে রশিদের স্ত্রী-সন্তান ছিলেন। 

গুলির ঘটনার পর আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ভাতিজা সম্প্রতি সদর উপজেলার একটি গরুর হাটের ইজারা পেয়েছেন। সেই ইজারা প্রত্যাহারের জন্য বিএনপির এক নেতা বিপ্লব চরমপন্থি সংগঠনের নেতাদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে মোবাইল ফোনে তাঁকে এবং ভাতিজাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

আবদুল রশিদের ছেলে শাহরিয়ার রশিদ জানান, দুপুরের দিকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান। নিচ থেকে বাড়ির দারোয়ান গুলি ছোড়ার বিষয়টি জানায়। পরে দেখা যায়, তৃতীয় তলার কাচ ভেদ করে গুলি ভেতরে চলে গেছে। কাচের টুকরো নিচে ও আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। 

বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি আসেন। তাদের দু’জন মাস্ক ও হেলমেট পরা ছিলেন। বাড়ির সামনে দাঁড়ানোর অন্তত ১০ সেকেন্ড পর পেছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এর পর শহরের দিকে চলে যান। এই সময়ে সড়কে মানুষ চলাচলও করছিল। 

আবদুর রশিদ জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চাল ব্যবসার পাশাপাশি হাটবাজার ইজারা নেওয়ার ব্যবসা করেন। কয়েক দিন আগে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা গরুর হাটের ইজারা পান তাঁর ভাতিজা জিহাদুজ্জামান জিকু। দরপত্র কেনার পর থেকেই একটি চরমপন্থি সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ইজারাপত্র জমা না দিতে হুমকি দিয়ে আসছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চরমপন্থি নেতা স্বপন ঠাকুর পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব ও মুন্না নামে দু’জন এই হাট পরিচালনা করবে। এ জন্য ইজারা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। না হলে মেরে ফেলা হবে।

হুমকি পাওয়ার পর থেকে রশিদের ভাতিজা খাজানগর এলাকার গোল্ডেন অটো রাইস মিলের মালিক জিকু আত্মগোপনে রয়েছেন। জিকু বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদকও।  

জিকু মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একটি হাট ইজারা পেয়েছিলাম। হাটের দরপত্রে অংশ না নিতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে হাট ইজারা পাওয়ার পর হুমকি বেড়ে যায়। এই হুমকির সঙ্গে চরমপন্থি ও বিএনপির দলীয় কয়েকজন লোক জড়িত। নেপথ্যে থেকে বিএনপি নেতা বিপ্লবও এ কাজ করছে বলে ধারণা করছি।’

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ‘রশিদদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে তদন্ত করতে পারে। এই মৌসুমেও হাটের দরপত্র কিনেছিলাম। চরমপন্থিরা আমাকেও অংশ না নিতে হুমকি দিয়েছিল। এ জন্য আর এগোইনি। আমি বিএনপির রাজনীতি করি। হেয় করতে আমার নাম এখানে আনা হচ্ছে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘যে বা যারা পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়েছে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। যাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, কেউ তো ফাঁসানোর জন্যও করতে পারে।’

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চরমপন থ ব এনপ র ন র পর এ ঘটন ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ