ইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করে
Published: 10th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সরকারি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা যোদ্ধা নন, জঙ্গি নন কিংবা রকেট বা অস্ত্র লুকিয়ে রাখা গুপ্তঘাতকও নন। তারা ছিলেন স্রেফ সাহায্যকর্মী, যারা মানবতার পক্ষে কাজ করছেন। এই চিকিৎসকরা বোমা বর্ষণকালে আহতদের দিকে ছুটে যান। অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে তারা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিলেন।
২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি যানবাহনের একটি বহর লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর মধ্য দিয়ে আটজন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ছয়জন ফিলিস্তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মীকে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, যানবাহনগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ ছিল না এবং সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
সেটি ছিল মিথ্যা। নিহত চিকিৎসকদের একজন রিফাত রাদওয়ান। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার করা ফুটেজে লাল বাতির ঝলকানি দেখা গেছে এবং যানবাহনটি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। এতে কোনো ধরনের অস্ত্র ছিল না। সেখানে পাওয়া গেছে ইসরায়েলিদের প্রচণ্ড গুলিবর্ষণের নজির। পরে রিফাতের মৃতদেহ আরও ১৩ জনের সঙ্গে একটি গণকবরে পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে সরাসরি হত্যা করার চিহ্ন ছিল। যেমন, মাথায় অথবা বুকে গুলি করা ও হাত বাঁধা।
মৃত্যুর পরও তাদের প্রমাণ করতে হয়েছিল– তারা ছিলেন সাহায্যকর্মী। তবুও বেশির ভাগ পশ্চিমা মিডিয়া প্রথমে ইসরায়েলের বক্তব্য প্রকাশ করেছিল। যেমন ‘ইসরায়েল বলে .
মানবসত্তা অস্বীকার করা কেবল বাকসর্বস্বজনিত সমস্যা নয়। এটি কেবল মিডিয়া ফ্রেমবন্দি কিংবা রাজনৈতিক ভাষাগত সমস্যাও নয়। তারা হত্যা করে সবকিছু মুছে ফেলতে চায়। তারা আমাদের বলে, আপনার জীবন অন্যদের মতো একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা বৈধতা না দেওয়া পর্যন্ত আপনার দুঃখ বাস্তব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা অনুমোদন না করি, ততক্ষণ আপনার মৃত্যু দুঃখজনক নয়।
এই বোঝা অন্য কারও ওপর চাপানো হয় না। যখন পশ্চিমা সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়, তখন তাদের সম্মান করা হয়। যখন ইসরায়েলি সাধারণ নাগরিক মারা যায়, তখন তাদের নাম ও মুখ সারা বিশ্বে পর্দায় ভেসে ওঠে। যখন ফিলিস্তিনিরা মারা যায়, তখন তাদের পরিবারকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয়– তারা সন্ত্রাসী ছিল না। নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সবসময় দোষী, যা প্রায়ই দেখা যায়।
একের পর এক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যম ফিলিস্তিনিদের তুলনায় ইসরায়েলি উৎসের উদ্ধৃতি অনেক বেশি দেয় এবং ইসরায়েলি ভাষ্য একই কঠোরতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করতে ব্যর্থ হয়। ফিলিস্তিনি কণ্ঠস্বর কেবল প্রান্তিক নয় বরং প্রায়ই অবিশ্বাস্য বা আবেগপ্রবণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেন এ শোকের কোনো সত্যতা নেই। যেন ব্যথা আমাদের যুক্তিহীন করে তোলে।
মিডিয়া এ ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইন্ধন জোগায় এবং তা প্রচার করে। অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক দায়মুক্তি, আন্তর্জাতিক ফোরামে নীরবতা থেকে শুরু করে জাতিসংঘে ভেটো পর্যন্ত তা বিস্তৃত। সবকিছু একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাবা হয় না, তখন তাদের হত্যাকারীদের পুরোপুরি দায়ী মনে করা হয় না।
এই ১৫ জন চিকিৎসক এবং প্রথম সাড়া দানকারীরা ছিলেন আমাদের নায়ক। তারা উদ্ধারে ছুটে গিয়েছিলেন। তারা তাদের লোকদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তারা জীবনের মূল্য ও মর্যাদায় বিশ্বাস করতেন। এমনকি যেখানে জীবন জিম্মি হয়ে আছে এবং অবরুদ্ধ, সেখানে সেই মূল্য দিতে হবে। তাদের সসম্মানে স্মরণ করতে হবে। এর পরিবর্তে তাদের গল্পটি আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
আমাদের মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে হয়– বিশ্ববাসীর উচিত এটি অচিরেই বন্ধ করতে বাধ্য করা। আমরা মিথ্যা বলি এবং আমাদের খুনিরা সত্য বলে। এ অনুমান করা বন্ধ করুন। এমন এক ভাষ্য গ্রহণ করা বন্ধ করুন, যেখানে শোক প্রকাশের জন্য ফিলিস্তিনিদের সাধু হতে হয়। এই চিকিৎসকদের বিশ্বাস করা উচিত। তারা সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। সর্বোপরি তাদেরও মানুষ হিসেবে দেখতে হবে।
আহমেদ নাজের: ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাট্যকার; আলজাজিরা থেকে ভাষান্তরিত
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তখন ত দ র আম দ র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ
এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।
সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।
ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।
‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।
ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।
এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরীডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।
প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।
পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।
বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।
নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউবইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।
ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।
২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।