Samakal:
2025-09-18@03:08:36 GMT

‘আমার জন্য কেউ আগাইয়া আসলো না’

Published: 10th, April 2025 GMT

‘আমার জন্য কেউ আগাইয়া আসলো না’

সুখের সংসারই ছিল মুক্তার হোসেনের। গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এর পরই অন্ধকার নেমে আসে তাঁর জীবনে। চিকিৎসা খরচ জোগাতে নিজের উপার্জনের ভ্যান ও অটোরিকশা বিক্রি করে এখন তিনি নিঃস্ব। পাননি সরকারি কোনো সহযোগিতা।

মুন্সীগঞ্জ শহরের মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা মুক্তার (৪৪) একজন ভ্যানচালক। মা-বাবা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও শরীরে বুলেটের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ফিরতে পারছেন না স্বাভাবিক জীবনে। আর কাজে যেতেও পারেন না। সংসারে তাই নিত্য টানাপোড়ন। স্ত্রী বিলকিস বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে চালাচ্ছেন সংসারের খরচ। জীবনের এমন কঠিন সময়ে স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন মুক্তার। 

২০২৪ সালের ৪ আগস্টের সকাল। মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে শামিল হন মুক্তার। এক পর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেটে ঝাঁজরা হয় তাঁর শরীর। এ সময় অস্ত্রধারী এক ছাত্রলীগ নেতাকে জাপটে ধরে ফেললে সেই নেতা মুক্তারের পায়ে গুলি করে। এতে সড়কে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে ছাত্র-জনতা তাঁকে উদ্ধার করে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা দিয়ে তাঁর শরীর থেকে ৬৫টি রাবার বুলেট ও একটি শর্টগানের গুলি বের করা হয়েছে। পায়ের গুলির ক্ষতচিহ্ন এখনও রয়ে গেছে। একই সঙ্গে শরীরের নিচে রয়ে গেছে বুলেট। সেই ব্যথা নিয়ে কাতরান মুক্তার। সাহায্যের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন। অণ্ডকোষের পাশে গুলি আটকে থাকায় স্বাভাবিক চলাফেরাও ব্যাহত হচ্ছে তাঁর।

মুক্তার হোসেন জানান, শহরের থানারপুল এলাকার একটি ইলেকট্রনিক প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি হওয়া পণ্য তাঁর ভ্যানে করে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। এ থেকে দিনে হাজার দেড়েক টাকা রোজগার হতো। পাশাপাশি কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনে ভাড়া দিয়েছিলেন। ভাড়া পেতেন দৈনিক ৩০০ টাকা। এ দিয়েই সংসার চলত। কিন্তু  চিকিৎসার খরচ মেটাতে ভ্যান ও অটোরিকশা বিক্রি করে দিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে আহতের গেজেটেড তালিকায় নাম এলেও এখনও কোনো অর্থ সহায়তা পাননি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসা সহায়তার আবেদন জানালেও সাড়া মেলেনি। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমন্বয়কদের কাছে গিয়েও ফিরেছেন খালি হাতে। 

মুক্তার আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখন আফসোস লাগে, কাগো জন্য কী করলাম। আমার জন্য কেউ আগাইয়া আসলো না।’ 

সিভিল সার্জন ডা.

মঞ্জুরুল আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সরকারি আহতের তালিকায় জেলায় এ ক্যাটেগরিতে ১৩ জন, বি ক্যাটেগরিতে ২৩ জন ও সি ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন ১৪৪ জন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্থ সহায়তা পেয়েছেন মাত্র তিনজন। মুক্তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে আবেদন করলে তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত