কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের কোনামাটি গ্রামে যে কয়টি হস্তচালিত নলকূপ ছিল, সবগুলোই বিকল হয়ে গেছে। একটি দিয়েও এখন আর পানি উঠে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত কয়েক বছর চৈত্রমাস পর্যন্ত পানি পাওয়া গেলেও এ বছর ফাল্গুন মাসের শুরু থেকেই নলকূপে পানি উঠছে না। এমন অবস্থায় গ্রামের লোকজন যাদের সাবমারসিবল পাম্প রয়েছে সেখানে ঘটিবাটি-কলস নিয়ে ভিড় করছেন। পুরো রমজান মাসে একটু খাবার পানির জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের।

কোনামাটি গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মিয়া বলেন, ‘‘চার থেকে পাঁচ মাস আগে বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছি। মাত্র এক-দেড় মাস পানি পেয়েছি। কিন্তু, ফাল্গুন মাস থেকে নলকূপ দিয়ে আর পানি উঠছে না।’’

একই অবস্থা গ্রামের আব্দুল আউয়াল, রেখা আক্তার ও ফাতেমা আক্তারের। বৃদ্ধা ফাতেমা আক্তার জানান, ধারদেনা করে নলকূপ বসিয়েছেন। পানি না উঠায় নলকূপের মাথা খুলে রেখেছেন তিনি। এখন একটু খাবার পানির জন্য দূর-দূরান্তে যেতে হয়।

আরো পড়ুন:

ময়মনসিংহে বন্যা
ভারত সীমান্তবর্তী ৫০ গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ শতাধিক মানুষ

পঞ্চগড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলো দিয়ে আর পানি উঠছে না। ফলে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শুধু দুই উপজেলা নয়, জেলার সব উপজেলাতেই কমবেশি পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে পানির হাহাকার দেখা গেছে। সামর্থ্যবানরা সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করলেও বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শুধু উজানে নয়, হাওরাঞ্চলের লোকজনও ভুগছেন খাবার পানির সঙ্কটে।

করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘ইউনিয়নের সব অগভীর নলকূপ বিকল অবস্থায় রয়েছে। এতে খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি সেচ কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে।’’

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জানিয়েছে, পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি উঠে না। আর ৩০ ফুটের নিচে নেমে গেলে মোটর দিয়েও পানি তোলা যায় না। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন  উপজেলায় পানির স্তর ৩০ থেকে ৩৫ ফুটের মধ্যে। বর্তমানে এই স্তর অনেক স্থানে ৩৭ থেকে ৪০ ফুটে নেমে গেছে। বৃষ্টি না হলে পানির স্তর আরো নিচে নামবে। তাতে নলকূপে পানি না উঠার আশঙ্কাই বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিকাজে মাটির নিচের পানি অতিরিক্ত ব্যবহার, বৃষ্টি না হওয়া ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কারণে পানির স্তরকে আরো নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‘ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে আমাদের দেশের শহর ও গ্রামে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। তখন ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট নিচ থেকেও পানি উঠে না। ফলে অনেকে ৫০০-৬০০ ফুটের সাবমারসিবল পাম্প বসান। পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হবে। নদ-নদী খনন করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এ সঙ্কট আরো তীব্র হবে।’’

কিশোরগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার নলকূপ রয়েছে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নলকূপে পানি উঠছে না বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। কিন্তু, এর নির্দিষ্ট সংখ্যা আমাদের কাছে নেই।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলায় সুপেয় পানির সঙ্কট বেশি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, কৃষিকাজে মাটির নিচের পানি বেশি ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর সাময়িক সমাধান হচ্ছে সাবমারসিবল পাম্প। আমরা সাময়িক সমাধান নিয়ে কাজ করছি। স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

ঢাকা/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ব প ন দ বস ক শ রগঞ জ সদর আম দ র নলক প

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ