বরবাদ– আয়োজনে, নির্মাণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সিনেমা। মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত ‘বরবাদ’ একটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। বিভিন্ন সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত পরিচালক তাঁর নিজের গল্পটি বলতে চেয়েছেন এবং পর্দায় পুরোটা সময় তিনি তাঁর দর্শকদের ধরে রাখতে পেরেছেন। কমার্শিয়াল স্পেসে তিনি লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্রায়ন করতে চেয়েছেন এবং বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে তিনি তাঁর সিনেমার ওয়ার্ল্ড বিল্ড করতে পেরেছেন। সেটা পলিটিক্যালি কতটা কারেক্ট, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ থাকলেও তিনি তাঁর দর্শকদের জন্য যে একটা সিনেম্যাটিক ওয়ার্ল্ড নির্মাণ করেছেন এবং দর্শক তা উপভোগ করেছে। 

রোমান্টিক অ্যাকশন থ্রিলার জনরার এই সিনেমার গল্প প্রেম, প্রতিশোধ, উপলব্ধি ও অনিবার্য পরিণতির দিকে এগোয়। ধনীর বখে যাওয়া পুত্র আরিয়ান মির্জার স্বেচ্ছাচারী জীবনে নিতু নামের এক সুন্দরী মেয়ের আগমন ঘটে। ঘটনার পরম্পরায় গল্প এগোলে দেখা যায় আরিয়ান মির্জার জীবনে নিতুর ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। নিতুর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের ভয়াবহ নেশাসক্ত জীবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁর নিজের সঙ্গেই চলে লড়াই! আক্ষরিক অর্থেই নিতুর ভালোবাসার জন্য সে সবকিছু বরবাদ করে দিতে পারে! কিন্তু গল্পটা এতটা সরল নয়! এরপরই গল্পে টার্ন অ্যান্ড টুইস্ট ঘটতে থাকে! বিশেষ করে ইন্টারভ্যাল ব্লকটা দুর্দান্ত! দেশসেরা সিনেমা তারকা শাকিব খান। আরিয়ান মির্জা চরিত্রে তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স ও পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। এটি ওয়ান ডাইমেনশনাল চরিত্র নয় রাউন্ড চরিত্র! এই চরিত্রের বেশকিছু শেড আছে, যার প্রতিটিতে তিনি জাস্টিস করেছেন।

 নিতু চরিত্রে ইধিকা পাল অনবদ্য! গল্পের হিরো তাঁকে বললেও অত্যুক্তি হবে না। কমার্শিয়াল নায়িকার শরীরী ভাষা তিনি ভীষণভাবে রপ্ত করেছেন! এই সিনেমার বিশেষ সারপ্রাইজ ছিলেন শক্তিশালী অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত। বিকৃত মানসিকতার চরিত্রটা দারুণভাবে শুরু হয়েছিল, শেষটা খুব রুটিন ছিল। যিশুর অভিনয় কিংবা চরিত্রের একটু  অপচয়ই করা হয়েছে। মিশা সওদাগর চমকে দিয়েছে আরিয়ান মির্জার বাবার চরিত্রে পরিমিত, আন্ডারটোন্ড অভিনয় করেছে। পরিচালক সবার ক্ষেত্রেই ভালো অ্যাক্টিং ডিল করেছেন। আর জিল্লু তো ভাইরাল! চিত্রনাট্য গতিশীল ও মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আপনি অনুমান করতে পারবেন কী হতে যাচ্ছে কিন্তু এত ঘটনাবহুল স্ক্রিনপ্লে যে আপনি বোর হওয়ার সময় পাবেন না। তবে কিছু সম্পর্ক নির্মাণে আর একটু সময় দিলে হয়তো ভালো হতো। বেশ কিছু উপভোগ্য মাস মোমেন্ট তৈরি করেছেন পরিচালক। সংলাপ ঠিকঠাক! বাণিজ্যিক সিনেমার সূত্র মেনে দারুণ কিছু সংলাপ ছিল। “এই জিল্লু মাল দে” তো মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিচালনা দারুণ স্টাইলাইজড। 

পরিচালক তাঁর কাজে মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি হিরো চরিত্রের মধ্য দিয়ে অনেক নেতিবাচক জিনিসপত্র দেখালেও তিনি পোয়েটিক জাস্টিস করেছেন! প্রত্যেকটি চরিত্রের যা প্রাপ্য তা তিনি মিটিয়েছেন! এই সিনেমার একটি রিডেম্পশন বা আত্মশুদ্ধির বিষয়ও পরিচালক দেখিয়েছেন; যা নির্মাতা হিসেবে তাঁর পরিণত বোধকে তুলে ধরে। চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা এই ছবির বিশেষ হাইলাইট। বিজিএম লার্জ স্কেলের এই ছবিকে যথাযোগ্য সঙ্গ দিয়েছে। গান সবগুলোই সিনেমা হলে শুনতে ভালো লাগে কিন্তু হল হতে বের হওয়ার পর “নিঃশ্বাস” গানটি কানে লেগে থাকে। “মায়াবি” গানটি না হলে কোনো ক্ষতি হতো বলে মনে হয় না! সব মিলিয়ে উপভোগ্য ছবি বরবাদ। ভায়োলেন্স ও ড্রাগ এর অতি ব্যবহারের ফলে সিনেমাটি  ‘এ’ রেটিং পেলেই যথার্থ হতো।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর য় ন ম র জ কর ছ ন র জন য পর চ ল বরব দ

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমি: যেখানে ‘শিল্প-বাণিজ্য’ আছে, ‘কলা’ নেই

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ আছ এক বছরের বেশি সময় ধরে। একাডেমির মাঠে এক মাস ধরে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানায়, জেলা শহরের তুলাসার মৌজায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান। তিন কক্ষের একটি টিনশেডের আধা পাকা ঘরে ১৯৮০ সালে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫ বছর ধরে সেই ঘরেই একাডেমির কার্যক্রম চলছে।

শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা ও তালযন্ত্র বিভাগ আছে। বিভাগগুলোতে শিশু-কিশোরেরা প্রশিক্ষণ নেয়। এ বছর সংগীত ও নৃত্য বিভাগে ৬৮ জন ভর্তির তথ্য আছে। অন্য বিভাগগুলোতে কতজন ভর্তি হয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। আগের বছরগুলোতে কোন বিভাগে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তার কাছে নেই।

জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরে যোগ দিয়েছেন। এর পর থেকে শিল্পকলার কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষণ বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। গত মে মাসে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, ১৪ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে সব বিভাগের প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। সংগীত, চারুকলা ও তালযন্ত্রের (তবলা) প্রশিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নৃত্য, নাটক ও আবৃত্তির প্রশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আবার দেওয়া হবে।

কয়েকজন অভিভাবকের ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পকলা মাঠে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজন করার জন্য নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক গত ১২ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের জন্য সেখানে মেলার আয়োজন করার অনুমতি দেন। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি মাঠের ওই মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ৫৫টি দোকান বসানো হয়েছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির আশপাশে আছে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মহিলা সংস্থার কার্যালয়, শিশু একাডেমি, শিশুদের বিনোদনের শরীয়তপুর পার্ক ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। মেলার কারণে ওই এলাকায় এবং সদর হাসপাতালের সামনে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘জেলা হাসপাতালের সামনে এমন একটি মেলার অনুমতি কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। ওই মেলার কারণে হাসপাতালের প্রবেশমুখে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।’

শরীয়তপুরের কবি ও সাহিত্যিক শ্যামসুন্দর দেবনাথ বলেন, ‘একটি জেলার সরকারি পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হচ্ছে শিল্পকলা। তা কীভাবে এক বছর ধরে বন্ধ থাকতে পারে, আমাদের বোধগম্য নয়। এই প্রজন্মের কিশোর ও তরুণদের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি এমনিতেই আগ্রহ কম। তার ওপরে সংস্কৃতির প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ রাখা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’

সার্বিক বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মাঠে এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি দেওয়ার আগে তিনি জানতেন না, স্থানটি হাসপাতালের সামনে। আর নানা কারণে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক নিয়োগে দেরি হচ্ছে। নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই শিল্পকলার কার্যক্রম চালু করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ