‘হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, জানালা দিয়ে দেখি আগুনের লেলিহান শিখা’
Published: 10th, April 2025 GMT
‘রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছি। ফজরের আজানের আগে–পরে হবে, হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ভেবেছিলাম চোর-ডাকাত হবে। জানালা দিয়ে বাইরে দেখি আগুনের লেলিহান শিখা। চিৎকার শুরু করি। এরই মধ্যে ফোন আসে নির্বাহী প্রকৌশলীর। তিনি আমাকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে বলেন। আমি তিনতলার দিকে নামার জন্য আসি। কিন্তু আগুনের তাপ তখন অনেক বেশি। আবার রুমে ফিরে যাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের ভাইয়েরা চলে আসে। জানালার পাশে একটা মই সেট করে। পরে গ্রিল কেটে আমাকে বের করা হয়।’
দিনাজপুর এলজিইডি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারতলা থেকে উদ্ধার হওয়া রবিউল ইসলাম এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন। তিনি বিআইডব্লিউটিএর রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক। গতকাল বুধবার নদ-নদীর খননকাজ পরিদর্শনে দিনাজপুরে এসে এলজিইডি ভবনের চতুর্থ তলায় থাকা চারটি অতিথি কক্ষের (গেস্ট রুম) একটিতে রাতে অবস্থান করছিলেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডে তাঁর ডান হাতের তালু পুড়ে গেছে। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন।
দিনাজপুর শহরের কসবা এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) ভবনে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দিনাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। এ সময় চতুর্থ তলার অতিথিকক্ষে আটকে পড়া দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আরও পড়ুনদিনাজপুর এলজিইডি ভবনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে, আটকে পড়া ২ কর্মকর্তাকে উদ্ধার৭ ঘণ্টা আগেএলজিইডির অতিথি কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছি। ছোট ছোট দুই মেয়ে, এক ছেলে আমার। প্রথমেই তাদের কথা মনে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল আজই আমার শেষ দিন। অফিসে জানিয়েছি। পরিবারে এখনো জানাইনি। আল্লাহর অশেষ রহমত। এখন ভালো আছি।’
উদ্ধার হওয়া আরেকজন আবদুল মান্নাফ হোসেন। তিনি এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী। কয়েক দিন আগেই দিনাজপুর অফিসে যোগদান করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের চারতলার পূর্ব প্রান্তের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফজরের আজানের সময় ঘুম ভাঙে। নামাজ পড়া শেষ করেছি মাত্র। ওই সময় স্যার (নির্বাহী প্রকৌশলী) ফোন করে জানান, ‘‘ভবনে আগুন লাগছে, তুমি বের হবার চেষ্টা করো।’’ কিন্তু চারতলা থেকে দুইতলা পর্যন্ত আসছি। আগুন দেখে আবার ফিরে গেছি। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে আমাকে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছি।’ কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে তাঁর।
দিনাজপুর এলজিইডি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋত্বিকের বাড়ি যেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’
বরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার এক বছর পার হয়েছে। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি এখন কেবলই ইটের স্তূপ আর আগাছায় ভরা এক ধ্বংসস্তূপ। স্মৃতিচিহ্ন বলতে টিকে আছে ভাঙা ইটের পাঁজা আর কয়েকটি ভাঙা দেয়াল, যেখানে গত বছর আঁকা হয়েছিল ঋত্বিকের একটি পোর্ট্রেট। সেই দেয়ালই যেন নির্বাক হয়ে জানান দিচ্ছে এক সাংস্কৃতিক অবহেলার করুণ ইতিহাস।
গতকাল রোববার ঋত্বিকের পৈতৃক ভিটায় গিয়ে দেখা যায়, খসে পড়া দেয়ালে ‘বাড়ী থেকে পালিয়ে’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘অযান্ত্রিক’-এর মতো সিনেমার নাম ও চিত্রকর্ম আঁকা। এর মাঝে মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে ছোট চুলের ঋত্বিক ঘটক যেন তাকিয়ে আছেন তাঁরই বাড়ির ধ্বংসাবশেষের দিকে।
অথচ এই বাড়ির সূত্রেই বহু মানুষ রাজশাহীকে চিনেছেন। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ঋত্বিকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখার স্মৃতিচারণায় একবার বলেছিলেন, ‘সেই সিনেমা দেখার মুগ্ধতা বুকের মধ্যে মধুর মতো জমে আছে।’ কালের পরিক্রমায় ঋত্বিকের সেই বাড়িই আজ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ হয়ে গেছে। স্মৃতি আছে, কিন্তু অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। রাজশাহীর চলচ্চিত্রকর্মীরা চান, এই ধ্বংসস্তূপের ওপরই ঋত্বিকের স্মৃতি সংরক্ষণে টেকসই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হোক।
ঋত্বিক ঘটক