‘রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছি। ফজরের আজানের আগে–পরে হবে, হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ভেবেছিলাম চোর-ডাকাত হবে। জানালা দিয়ে বাইরে দেখি আগুনের লেলিহান শিখা। চিৎকার শুরু করি। এরই মধ্যে ফোন আসে নির্বাহী প্রকৌশলীর। তিনি আমাকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে বলেন। আমি তিনতলার দিকে নামার জন্য আসি। কিন্তু আগুনের তাপ তখন অনেক বেশি। আবার রুমে ফিরে যাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের ভাইয়েরা চলে আসে। জানালার পাশে একটা মই সেট করে। পরে গ্রিল কেটে আমাকে বের করা হয়।’

দিনাজপুর এলজিইডি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারতলা থেকে উদ্ধার হওয়া রবিউল ইসলাম এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন। তিনি বিআইডব্লিউটিএর রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক। গতকাল বুধবার নদ-নদীর খননকাজ পরিদর্শনে দিনাজপুরে এসে এলজিইডি ভবনের চতুর্থ তলায় থাকা চারটি অতিথি কক্ষের (গেস্ট রুম) একটিতে রাতে অবস্থান করছিলেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডে তাঁর ডান হাতের তালু পুড়ে গেছে। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন।

দিনাজপুর শহরের কসবা এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) ভবনে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দিনাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। এ সময় চতুর্থ তলার অতিথিকক্ষে আটকে পড়া দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুনদিনাজপুর এলজিইডি ভবনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে, আটকে পড়া ২ কর্মকর্তাকে উদ্ধার৭ ঘণ্টা আগে

এলজিইডির অতিথি কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছি। ছোট ছোট দুই মেয়ে, এক ছেলে আমার। প্রথমেই তাদের কথা মনে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল আজই আমার শেষ দিন। অফিসে জানিয়েছি। পরিবারে এখনো জানাইনি। আল্লাহর অশেষ রহমত। এখন ভালো আছি।’

উদ্ধার হওয়া আরেকজন আবদুল মান্নাফ হোসেন। তিনি এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী। কয়েক দিন আগেই দিনাজপুর অফিসে যোগদান করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের চারতলার পূর্ব প্রান্তের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফজরের আজানের সময় ঘুম ভাঙে। নামাজ পড়া শেষ করেছি মাত্র। ওই সময় স্যার (নির্বাহী প্রকৌশলী) ফোন করে জানান, ‘‘ভবনে আগুন লাগছে, তুমি বের হবার চেষ্টা করো।’’ কিন্তু চারতলা থেকে দুইতলা পর্যন্ত আসছি। আগুন দেখে আবার ফিরে গেছি। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে আমাকে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছি।’ কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে তাঁর।

দিনাজপুর এলজিইডি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন র হওয়

এছাড়াও পড়ুন:

জাফলংয়ে বালু উত্তোলনের দায়ে ডোবানো হলো ৩৫ নৌকা

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকায় পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়েছে টাস্কফোর্স। এ সময় বালুবাহী ৩৫টি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধ্বংস করা হয় আরো ২০টি নৌকা ও ৫টি ড্রেজার মেশিন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রতন কুমার অধিকারী। অভিযানে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা অংশ নেন।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর জিরো পয়েন্ট, বল্লা ঘাট ও নয়াবস্তি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল একটি চক্র। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ।

অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবীর হোসেন, সংগ্রাম বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার শহিদুল ইসলাম ও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল্লাহসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেছেন, “অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/নূর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ