রপ্তানির বিকল্প পথ কমল, বাড়বে চাপ
Published: 11th, April 2025 GMT
ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে এত দিন বিশ্বের ২৩টি দেশে রপ্তানি হয়ে আসছিল বাংলাদেশের পণ্য। বাংলাদেশকে একটানা প্রায় সাড়ে ছয় বছর দেওয়া এই সুবিধা গত বুধবার প্রত্যাহার করেছে ভারত। তাতে আকাশপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ভারত এই সুবিধা দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান সড়কপথে বেনাপোল থেকে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে সিংহভাগই পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সংখ্যায় ৬০৬। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ঢাকার চেয়ে কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার খরচ কম হয় কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারে। আবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে জটের কারণেও দ্রুত পণ্য পরিবহনে কলকাতা বিমানবন্দরের ব্যবহার বাড়ছিল। ভারত এই সুবিধা বাতিল করায় পোশাক রপ্তানিতে বিকল্প একটি পথ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। এতে বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে।
ভারত যেহেতু এই সুবিধা বন্ধ করেছে, তাই পোশাক খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আবার উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহনে ভাড়াও নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফকির ফ্যাশনজাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানিকারক সূত্রে জানা যায়, গত বছর বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৪৪ হাজার টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় সামনে একই পরিমাণ পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে। আকাশপথে মাঝারি আকারের উড়োজাহাজে পরিবহন করা যায় ৬০ টন পণ্য। সেই হিসাবে এসব পণ্য পরিবহনে দরকার হবে অন্তত ৭৩০টি বাড়তি ফ্লাইট। রপ্তানিকারকদের শঙ্কা, বাড়তি চাপের কারণে ঢাকার আকাশপথে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়তে পারে। আবার জটও তৈরি হতে পারে।
বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭ কোটি ডলারের পৌনে ৫ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছে। সর্বশেষ গত সোমবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিষ্ঠানটির একটি চালান স্পেনে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত খরচ কমানোর জন্য পোশাক ক্রেতারা কলকাতার বিমানবন্দর ব্যবহার করে আমাদের পণ্য নিয়েছে। ভারত যেহেতু এই সুবিধা বন্ধ করেছে, তাই পোশাক খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আবার উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহনে ভাড়াও নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।’
গত বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন অ্যাপারেলসের চারটি চালান বেনাপোল হয়ে সড়কপথে কলকাতা বন্দর দিয়ে সুইডেনে রপ্তানি হয়। কেন বিদেশি ক্রেতা কলকাতার বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় ঢাকার চেয়ে আকাশপথে কলকাতার ভাড়া কেজিতে ৫০ সেন্ট কম ছিল। আবার ঢাকায় বুকিং পেতে দেরি হচ্ছিল। এ জন্য বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে ও কম সময়ে পণ্য নেওয়ার জন্য কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।
শুরু ২০১৮ সালে২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এক আদেশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়। আদেশে ভারতের পেট্রাপোল (বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল) শুল্কস্টেশন দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দর ও কলকাতা বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভারতের গেদে (বাংলাদেশ অংশে দর্শনা) শুল্কস্টেশন দিয়ে রেলে ভারতের নভোসেবা বন্দর ব্যবহারেরও সুবিধা দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ শুধু বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।
এই সুবিধা দেওয়ার পর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম চালান রপ্তানি করে গাজীপুরের পি এন কম্পোজিট। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম চালানে প্রায় ৪ হাজার কেজি ওজনের ৬০ হাজার ডলারের টি–শার্ট কলকাতা বিমানবন্দরের মাধ্যমে স্পেনে রপ্তানি করে। পরীক্ষামূলক রপ্তানি সফল হওয়ার পর দফায় দফায় এই সুবিধার মেয়াদ বাড়ায় ভারত।
বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এই সুবিধা পাওয়া গেলেও খুব বেশি চালান রপ্তানি হয়নি শুরুতে। এই সুবিধা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৩ সালে এই সুবিধা ব্যবহার করে রপ্তানি হয় ১৯ কোটি ডলারের পণ্য। ২০২৪ সালে রপ্তানি হয় ৬২ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি বছরও বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৮৮৮টি চালান গেছে এই পথে।
বুধবার এই সুবিধা বাতিল হওয়ার আগে সোমবার ১১টি চালান বেনাপোল দিয়ে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে। সুবিধা প্রত্যাহার হওয়ায় ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাক গতকাল বৃহস্পতিবার ফিরিয়ে দিয়েছে।
চাপ বাড়বে শাহজালাল বিমানবন্দরেআকাশপথে বছরে দুই লাখ টনের বেশি পোশাক রপ্তানির চাহিদা আছে। এর মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশই পরিবহন হচ্ছে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। বাকি ১৫-২০ শতাংশ এত দিন ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন হয়ে আসছিল। ভারত সুবিধাটি বাতিল করায় এখন আকাশপথে শতভাগ পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে।
বিদেশি ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে চাহিদার তুলনায় পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা কম। বিগত সময়ে ডলার–সংকটে বিমান সংস্থাগুলোর বকেয়া আটকে গিয়েছিল। সে জন্য অনেক উড্ডয়ন কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ উড়োজাহাজ পরিচালনার খরচ বেশি। এসব কারণে উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ কলকাতার চেয়ে একটু বেশি। এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হলে এই চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব।
বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, মূলত কলকাতা দিয়ে ২৩টি দেশে পোশাক রপ্তানি হলেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চালানের গন্তব্য ছিল স্পেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক ক্রেতা স্পেনের ইন্ডিটেক্সই এই পথ ব্যবহার করে বেশি চালান নিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে আলোচনা দরকারবাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তবে ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাক বিক্রেতারা দ্রুত সময়ে পোশাক নেওয়ার জন্য আকাশপথ বেছে নেন। আবার লোহিত সাগর সংকটের সময়ও আকাশপথে পণ্য নিয়ে গেছেন বিদেশি ক্রেতারা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার চেয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন খরচ কম। ঢাকা থেকে আকাশপথে কেন খরচ বেশি, তা পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় সাশ্রয় করা গেলে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি পোশাক খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার।
এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও তাতে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমরা সংকট কাটানোর চেষ্টা করব।’ এ জন্য অবকাঠামো ও খরচ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল ক স টমস প রথম আল ক ২০১৮ স ল এই স ব ধ হ র কর ছ কলক ত র খরচ কম দরক র ন খরচ সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।
এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন।
এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।
কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।
সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।
বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।
সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।
ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/তানিম/রাসেল