প্রসূতির মৃত্যুতে হাসপাতালে ভাঙচুর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-সেনাবাহিনী
Published: 11th, April 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরে কর্তব্যরত ভিজিটরের অবহেলায় একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিদা বেগম (৩২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগে গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভাঙচুর চালিয়েছে। এসময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ভিজিটর আকলিমাকে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এ ঘটনাটি ঘটে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে খবর পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও অবরুদ্ধ ভিজিটরকে উদ্ধার করে।
পরে স্বামীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত প্রসূতির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ ।
প্রসূতির পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, বুধবার বিকালে পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মহসিন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহিদা বেগমের প্রসব বেদনা দেখা দিলে উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপদ প্রসব সেন্টারে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত ভিজিটর আকলিমা বেগমের সহায়তায় রাতে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে শাহিদার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। বাচ্চা প্রসবের পর থেকে শাহিদা বেগমের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্ত্রীর ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে স্বামী মহসিন বারবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিজিটরকে অনুরোধ করেন জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু ভিজিটর আকলিমা তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে দেননি। নিজেই শাহিদা বেগমকে চিকিৎসা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভোর রাতে সাহিদার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি গোপন করে আকলিমা সাহিদার স্বামীকে পার্শ্ববর্তী শামসুল হুদা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। শাহিদার স্বামী তার স্ত্রীকে শামসুল হুদা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে গেলে তারা উক্ত রোগী গ্রহণ করতে রাজি হননি।
পরবর্তীতে নোয়াখালীর প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে গেলে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক জানান রাতেই শাহিদার মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ স্বজনরা শাহিদার লাশ নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মিছিল করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালে ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে স্থানীয় দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে চন্দ্রগঞ্জ থানা ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অবরুদ্ধ ইউনিয়ন পরিবার-পরিকল্পনার পরিদর্শক আকলিমা আক্তারসহ অন্য নারী নার্সদের সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান জানান, নিহতের লাশ পরিবার নিয়ে গেছে। অবরুদ্ধ ভিজিটরসহ অন্যদের সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মামলা অথবা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজমুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, “প্রসূতি মা শাহিদা ডেলিভারি ব্যথা নিয়ে যখন এসেছে, তখন তার প্রচুর জ্বর ছিল। আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত ভিজিটর আকলিমা রোগীর স্বজনদের বলছে আপনারা লক্ষ্মীপুর নিয়ে যান। তারা বলছে আপনারা চেষ্টা করেন। কারণ এ রোগীর আগের দুইটি সন্তান এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হয়েছে। এটি ওই-অঞ্চলের নারীদের আস্থার সেবা কেন্দ্র। প্রতি মাসে প্রায় ৪০টি ডেলিভারি হয় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। রোগীর বাচ্চা নরমালে হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সকালে প্রসূতি মাকে স্বজনরা নোয়াখালী নিয়ে যায়। এরপর তারা লাশ নিয়ে এসে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। ভিজিটরকে অবরুদ্ধ করে রাখে, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় বলে আমি শুনেছি।”
ঢাকা/লিটন/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত অবর দ ধ প রস ত পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।