চট্টগ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া তরুণীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় জড়িত সেই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোরে কক্সবাজারের রামু থানার রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার যুবক হলেন- সাতকানিয়া থানার খাগরিয়া ইজ্জত বর বাড়ির মৃত সৈয়দ আহম্মদের ছেলে নাজিম উদ্দিন (৩০)। তিনি সম্পর্কে ওই তরুণীর আপন খালাতো মামা। গত ৮ এপ্রিল গভীর রাতে চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকায় নানার বাড়িতে খুন হন তামান্না নাহিদ ইয়া ওরফে আরজু আক্তার (২০)। তরুণীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে খুন করা হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে গ্রেপ্তারের পরও মুখ খোলেনি ওই যুবক।

পুলিশ জানায়, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন আরজু। আর ঘটনার রাতে খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন নাজিম। গভীর রাতে সে আরজুকে মুখে ওড়না ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। দেখে ফেলায় আরজুর নানা আবদুল হাকিম (৭০) ও নানি ফরিদা আক্তারকে (৬০) কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় নিহত আরজুর বাবা বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আত্মগোপনে থাকা নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তবে খুনের কারণ সম্পর্কে এখনো মুখ খোলেনি।

তিনি আরও বলেন, নিহত তরুণীর সুরতহাল প্রতিবেদন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও মামলার এজাহার অনুযায়ী ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ওই তরুণীকে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। দেখে ফেলায় তরুণীর নানা-নানীকেও জখম করা হয়। হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানতে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য র কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম

দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল  মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।

বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর  অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ