কুষ্টিয়ার চালকলমালিক ও ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনাকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম (বিপ্লব)। তিনি বলেন, ‘রশিদ সাহেব নাটক তৈরি করেছেন।’

শুক্রবার দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাহিদুল ইসলাম এ দাবি করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের কারণে রশিদ তাঁর (বিপ্লব) বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করার চক্রান্ত করছেন। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে আয়োজনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপি লেখা থাকলেও মঞ্চে জাহিদুল ছাড়া আহ্বায়ক বা অন্য কোনো শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি।

গত বুধবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে শহরের গোশালা সড়কে রশিদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় রশিদ খাজানগর এলাকায় নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি। ঘটনার পর তিনি বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, চরমপন্থী সংগঠনের নেতাদের দিয়ে জাহিদুল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম চালকল নেতা আবদুর রশিদকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও তাঁর চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমানের সঙ্গে ব্যবসা করতেন বলেও জানান। জাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি (জাহিদুল) বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছেন। ৯টি মামলাসহ ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে কুষ্টিয়ায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।

তারেক রহমানের নির্দেশনা থাকায় তিনি কোনো টেন্ডারবাজিতে জড়িত নন দাবি করে জাহিদুল বলেন, তিনি একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। জীবিকার জন্য ত্রুটি ও ঝামেলামুক্ত কাজগুলোতে অংশ নেন। অথচ তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করতে রশিদ ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাঁকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। গুলিবর্ষণের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে রশিদ সাংবাদিকদের কাছে তাঁকে জড়িয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এলাকায় রশিদদের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। এ জন্য তাঁকে রাজনীতিকভাবে হেয় করতে একটি ভিন্ন ইস্যুকে তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে তিনি (রশিদ) রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেষ্টা করছেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, রশিদের বড় ভাই সিদ্দিকুর রহমান বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। পরে সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাঁরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হানিফের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও হাটঘাট ইজারা নিয়ে পরিচালনা করেছেন। তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন হানিফ ও তাঁর চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর রশিদ কুষ্টিয়ার বৃহত্তম চালের মোকাম থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে হানিফ ও আতাউরকে দিয়েছেন। সরকারি চাল সংগ্রহের কমিশনের টাকা দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণ করে দিয়েছেন।

জাহিদুল আরও বলেন, ‘২০২২ সালে ক্ষমতার দাপটে আইলচারা বাজারে ভিআইপি অটো রাইস মিল ও ভিআইপি অটো ফ্লাওয়ার মিল দুটির প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ মাত্র ১৩ কোটি টাকায় গোপনে ব্র্যাক ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়ে নেন। এ ব্যাপারে হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় হানিফের ক্ষমতা দেখিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মিল দুটি দখলে নেন রশিদ। এ ঘটনায় আমি ও আমার মামাতো ভাই ভিআইপি অটো রাইস মিলের পক্ষে হাইকোর্টে মামলা পরিচালনা ও তদারকি করি। এ কারণে আমার ও আমার মামাতো ভাই মুন্নার ওপর রশিদের প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। ওই সময় তিনি (রশিদ) বলেছিলেন, আমাদের দেখে নেবেন। এ কারণেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদুল ইসলামের করা অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তাঁর সব অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট। থানায় মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখছে। তারাই তদন্ত করে দেখবে কারা কারা জড়িত আছেন।’

বাড়িতে গুলির ঘটনায় ঘটনার পরদিন হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় একটি মামলা করেন আবদুর রশিদ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুস সাকির নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গুলিবর্ষণের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম সদর উপজ ল র জন ত ক কর ছ ন রহম ন সরক র আওয় ম র ঘটন ব এনপ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ