বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন
Published: 11th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ তার সমজাতীয় এবং রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দীর্ঘদিন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে আছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আনতে বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল করেছে অনেক আগেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করে নতুন করে চেষ্টা করছে। কিন্তু এফডিআই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের মোট এফডিআইর পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। বিদেশি বিনিয়োগে এমন দুর্বল পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ঢাকায় বড় বিনিয়োগ সম্মেলন করেছে। সরকার আশা করছে, পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এমনিতে বাংলাদেশে খুব অল্প পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তার মধ্যে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য অঙ্কের পুঁজি প্রত্যাহার হয়। এতে দেখা যায়, নিট বা প্রকৃত এফডিআইর পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার বড় সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে। এখনও সংকট চলছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারে ধারাবাহিক পতন রয়েছে। বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভও খুব কম। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারলে এ সমস্যার অনেকটাই কাটানো যেত।
বাংলাদেশে এফডিআই কম কেন? এর কারণ নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং দেশের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে অনেক সুপারিশও করা হয়েছে। ঢাকায় যে বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে, সেখানেও প্রায় একই রকম আলোচনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ পণ্য উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক বাজারে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর গুরুত্ব শুধু পুঁজি বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষতা উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এফডিআই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
কম থাকার নানা কারণ
বিনিয়োগ সম্মেলনে যারা এসেছিলেন তারা বিভিন্ন বাধার কথা বলেছেন। তারা প্রধান চারটি বাধার উল্লেখ করেন। এগুলো হলো– সরকারি সেবার মান, ইউটিলিটি সেবার অপ্রতুলতা, দুর্নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর বোঝাপড়ায় ঘাটতি। তাছাড়া বিনিয়োগকারীরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। যখন বিনিয়োগে নামেন তখন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, সরকারের নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত সহযোগিতা পান না।
সম্মেলনে এক ব্রিফিংয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, যেসব বিষয়ে বেশি উদ্বেগ, তেমন ২০টি সুনির্দিষ্ট বিষয় বিডা আগেই চিহ্নিত করেছে এবং তা চলতি বছরের মধ্যে সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ চলছে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জ্বালানি নিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের অন্যতম প্রধান দুই উদ্বেগের বিষয়।
সম্মেলনে দেশের উদ্যোক্তারাও বিভিন্ন বাধার কথা বলেছেন। তাদের মতে, স্থানীয় হোক, আর বিদেশি হোক– সকল বিনিয়োগকারীর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতির ধারাবাহিকতা সবচেয়ে জরুরি। অন্যদিকে নীতি যা আছে, তার কার্যকর বাস্তবায়ন হতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় রাখাও খুব প্রয়োজনীয় বিষয়। এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাণিজ্য সংগঠন ফিকির সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার। তাঁর মতে, যে কোনো দেশের জন্য শক্তিশালী এফডিআই আকর্ষণের জন্য তিনটি বৈশিষ্ট্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত– বিশ্বাসযোগ্যতা থাকতে হবে। একটি দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা তখনই স্থাপিত হয়, যখন ট্রেড মার্ক, আইপিআর এবং এডিআর-সংক্রান্ত নিয়মকানুন ন্যায়সংগত ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং কোম্পানিগুলো তাদের পরিষেবার জন্য নির্বিঘ্নে অর্থ প্রাপ্তি এবং মুনাফা প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পায়।
তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিষয়টি হলো নীতির ধারাবাহিকতা। এমন এক ধরনের নীতি থাকতে হয়, যা আকস্মিক পরিবর্তন হয় না। প্রতিশ্রুত কর ছাড় বা আমদানি এবং রপ্তানি সুবিধা হঠাৎ বাতিল হয় না। শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয় না এবং যে কোনো প্রণোদনা বৈষম্য ছাড়াই সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়। তৃতীয় বিষয়টি হলো সামর্থ্য অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করা, তাদের যত্ন নেওয়া এবং ভ্যাট কাঠামো সহজ করে তোলা, পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ করের ওপর অধিক জোর দেওয়া, কার্যকর আয়কর কম রাখা এবং একটি ব্যবসাবান্ধব কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি।
বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড.
সুপারিশ
বিভিন্ন গবেষণা এবং আলোচনায় এমন মত রয়েছে, দেশের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত আইনি কাঠামো আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা আইন (১৯৮০) এবং কোম্পানি আইন হালনাগাদ করতে হবে। বাণিজ্যিক আদালতের অভাব, পুরোনো সালিশি আইন এবং সময়সাপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের অনেকে ঘোষণাবিহীন নীতিগত পরিবর্তনের কারণে অনিশ্চয়তা ও আস্থার সংকটে পড়েন, যা এফডিআই আকর্ষণের পথে বাধা। এসব বাধা দূর করতে হবে। বাধা দূর করতে একটি সুসংহত বিদেশি বিনিয়োগনীতি প্রণয়ন করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য পরিষেবার মান উন্নত করতে হবে। নিয়ন্ত্রক কাঠামো সহজ করা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ আধুনিক করার মাধ্যমে আরও উন্মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বিনিয়োগ সম্মেলনেও এসেছে।
সম্মেলনে আসা বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতি অপরিবর্তিত রাখা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার পাশাপাশি শুল্ক-কর ও গ্যাস-বিদ্যুতের মতো পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ পাবে। তাদের মতে, বিনিয়োগ করার পর নীতি পরিবর্তন করলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগসংক্রান্ত যেসব নীতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেগুলো পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের সময়েও অব্যাহত থাকবে এমন নিশ্চয়তা চেয়েছেন তারা।
এফডিআই পরিসংখ্যান
আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্ট-২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২৩ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। ওই বছর ভিয়েতনামে এফডিআই আসে ১৮৫০ কোটি ডলার। ভিয়েতনাম রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ। তারা বিদেশি বিনিয়োগ এনে রপ্তানি খাতে ব্যাপক বৈচিত্র্য এনেছে। অথচ বাংলাদেশ বছরের পর বছর তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
অর্থবছর অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এফডিআইর পরিসংখ্যান তৈরি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট এফডিআই আসে ৪১৯ কোটি ডলারের। এর মধ্যে পুঁজি প্রত্যাহার হয়েছে ২৭৭ কোটি ডলারের। নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১৪২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের এক মাসে আসা রেমিট্যান্সের অর্ধেকেরও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ ব্যালান্স অব পেমেন্ট প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ৮২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে একই সময়ে ১০৩ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য অন য য় ব যবস সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।