প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি হয়। কখনও ফেব্রুয়ারিতে না হলে মার্চে বৃষ্টির দেখা মেলে। বছরের প্রথম বৃষ্টির পানি গায়ে পড়ার পর চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসে, সবুজ পাতা বের হয়। মার্চ থেকে পাতা সংগ্রহ শুরু করে বাগান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ চলে গেলেও বাগানে পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়নি। এখন বাগান এলাকায় প্রচণ্ড রোদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাশিল্পের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। গত নভেম্বরের পর টানা ৪ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮ চা বাগান খরায় পুড়ছে। অতি গরমে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মরছে চা গাছ। গত নভেম্বর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড তাপ থেকে চা গাছ রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো বাগানে কনটেইনার ও কলসি দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাইপ দিয়ে কৃত্রিম সেচ দেওয়ারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিশাল বাগানের জন্য এই পানি সেচ সামান্য। কারণ এবার বাগানের পানি সংরক্ষণের প্রধান মাধ্যম হ্রদও শুকিয়ে গেছে। এসব কারণে গত বছরের তুলনায় এবার এক লাখ কেজি চা উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কর্ণফুলী চা বাগানের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক শাফি আহমদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের বাগান সবচেয়ে বড় বাগান। এবার দীর্ঘ মেয়াদে খরা দেখা দিয়েছে, চার মাস বৃষ্টি নেই, বাগানের গাছ মরে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে পোকার উপদ্রব বেড়ে গেছে, চা পাতার বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে, এতে উৎপাদনে ধস নামবে। সেচ সুবিধা দিয়ে চা গাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি নাহলে বাগানের ভয়াবহ ক্ষতি হবে।’
চা বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, চাশিল্প পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর। বৃষ্টি না থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। এখন তারা বিকল্প সেচের মাধ্যমে গাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এতে ব্যয় বাড়ছে। সেচ সুবিধার অভাবে প্রায় প্রতিটি বাগানের ১০-২০ শতাংশ চা গাছ মারা যাচ্ছে। খরায় সবুজ বাগানের চেহারা বদলে গেছে। খরা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় চা গাছে কুঁড়ি আসা দূরে থাক, উল্টো গাছ বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে।
খৈয়াছড়া চা বাগানের উপব্যবস্থাপক মো.
চৌধুরী চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চাশিল্প শতভাগ বৃষ্টিনির্ভর। বৃষ্টি হলেই চা পাতা উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টি পাচ্ছি না। ফলে এর প্রভাব উৎপানে পড়বে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে চা গাছ মরে যাচ্ছে। এত বাগান মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
রাঙাপানি চা বাগানের ব্যবস্থাপক উৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘গত নভেম্বরে বৃষ্টি হয়েছিল, এখনও বৃষ্টির দেখা নেই সে কারণে চা গাছ মরে যাচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ক্ষতির শিকআর হচ্ছেন।’
হালদা ভ্যালি চা বাগানের নির্বাহী পরিচালক আজম তালুকদার জানান, প্রখর রোদে চা গাছ জ্বলে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা কনটেইনার করে কৃত্রিম সেচ দিচ্ছেন, এতে উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া এমন আবহাওয়ায় বার্ষিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও থাকে। বাগানের হাজার হাজার চা-গাছ মরে গেছে। উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবার এক লাখ কেজি চা উৎপাদন কম হবে।
ফটিকছড়িতে রামগড় চা বাগান, আঁধার মানিক, নাছেহা, দাঁতমারা, নিউ দাঁতমারা, মা-জান, নেপচুন, পঞ্চবটি, মুহাম্মদনগর, হালদা ভ্যালি, এলাহী নূর, রাঙাপানি, বারমাসিয়া, কর্ণফুলী, উদালীয়া, খৈয়াছড়া, আছিয়া, চৌধুরীসহ মোট ১৮টি বাগান রয়েছে।
টিকে গ্রুপ পরিচালিত বাগানের মহাব্যবস্থাপক কাজী এরফানুল হক বলেন, ‘চা বাগানে থাকা বিশাল হ্রদে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে বাগানে পানি দিতে হয়। এবার হ্রদও শুকিয়ে গেছে। সাধারণত এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু চা বাগানে এবার বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উৎপাদনেও ধস নামতে পারে।’
চট্টগ্রামের হালদা ভ্যালি ও রামগড় চা বাগানের মালিক, শিল্পপতি নাদের খান বলেন, ‘বাগান জ্বলে যাচ্ছে। চাশিল্পকে রক্ষায় শতভাগ সেচের বিকল্প নেই। শতভাগ সেচে উৎপাদন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। অন্যথায় চা বাগান রক্ষা করা যাবে না। যদিও শতভাগ সেচ অনেক ব্যয়বহুল। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির বৈরি প্রভাবটা প্রথমে চা বাগানের ওপর পড়েছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ