গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
Published: 13th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজার অন্যতম প্রধান একটি হাসপাতাল ভবনে আজ রোববার দুটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
এ হামলায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, অভ্যর্থনাকেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরা।
হামলার ঘটনাটি ঘটেছে আল-আহলি আরব ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে। হামলার আগে আগে এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি একটি ফোনকল পেয়েছেন। যে ব্যক্তি ফোন করেছেন, তিনি নিজেকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে পরিচয় দেন। বলেন, হাসপাতালটিতে হামলা চালানো হবে। এরপরই হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে গাজার বেসামরিক জরুরি পরিষেবা। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো এই জায়গা ছেড়ে যাচ্ছে। তাদের কাউকে কাউকে হাসপাতালে থাকা অসুস্থ স্বজনদের নিয়ে যেতে দেখা যায়; যদিও এই ছবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
হামাস পরিচালিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে এই হামলাকে জঘন্য ও নোংরা অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবশিষ্ট অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েল একটি পদ্ধতিগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে ৩৪টি হাসপাতাল ধ্বংস করেছে।
আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধের নিন্দা জানানো সেনাদের চাকরিচ্যুত করবে ইসরায়েল১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি ভাঙার পর গাজায় ৫০০ শিশু হত্যা করেছে ইসরায়েল৮ ঘণ্টা আগেএর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে আল-আহলি আরব ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হন। তখন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইসরায়েলি বিমান হামলার জেরে হতাহত হওয়ার এই ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের ছোড়া রকেট ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছে প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ।
আরও পড়ুনইসরায়েলের অন্তত ৩৬ বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন শুধুই নারী ও শিশুরা১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনযে ফিলিস্তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।