প্রথম বছর ১০ লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে চাপ ট্রাম্পের
Published: 13th, April 2025 GMT
নির্বাচনে প্রচারের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার কথা বলে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই এ নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। মেয়াদের প্রথম বছরে আরও অভিবাসীকে বহিষ্কারের জন্য আগ্রাসীভাবে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ফেডারেল কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনায় বারবার প্রথম বছরে বহিষ্কার করতে চাওয়া একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংখ্যা উঠে আসছে, তা হলো ১০ লাখ। পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত চারজন বর্তমান ও সাবেক ফেডারেল কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
ট্রাম্প প্রশাসন এক বছরে ১০ লাখ অভিবাসীকে বের করে দিতে পারলে তা হবে বিশাল একটি রেকর্ড। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় বছরে সর্বোচ্চ এ সংখ্যা ছিল চার লাখের কিছু বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা বলেছেন, কীভাবে এ সংখ্যা গণনা করা হচ্ছে, তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, তহবিল, কর্মীদের স্তর ও দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আগে বেশির ভাগ অভিবাসীর আদালতের শুনানির অধিকার রয়েছে, তা বিবেচনা করলে এ লক্ষ্য অবাস্তব। যদিও তা অসম্ভব নয়।
বর্তমান ও সাবেক দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এই লক্ষ্য অর্জনে প্রায় প্রতিদিনই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং অন্যান্য ফেডারেল সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে কৌশল তৈরি করছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধির একটি কৌশল হলো ১৪ লাখ অভিবাসীর মধ্যে যাদের চূড়ান্ত নির্বাসন আদেশ রয়েছে, তাদের ফেরত পাঠানো। তাদের নিজ দেশ ফিরিয়ে নিতে না চাইলে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। সম্প্রতি আদালতে দায়ের করা এক মামলায় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা হাজার হাজার অভিবাসীকে তৃতীয় দেশ হিসেবে পরিচিত এমন গন্তব্যগুলোয় পাঠানোর আশা করছে। এমন ৩০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
মার্কিন প্রশাসন বছরের পর বছর ধরে তৃতীয় দেশে অভিবাসীদের পাঠানোর চেষ্টা করে আসছে। ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অভিবাসীকে তৃতীয় দেশে পাঠিয়ে দিতে চান। কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই মেক্সিকো, কোস্টারিকা, পানামাসহ এমন দেশগুলোয় তাদের পাঠানো শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই সরকারের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেননি। তিনি একটি ই-মেইলে বলেছেন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা মেরামত করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের ভোটারদের কাছ থেকে একটি ম্যান্ডেট ছিল। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন এই ম্যান্ডেট পূরণে একমত। স্বেচ্ছাচারী নয়, সন্ত্রাসী ও অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের গণনির্বাসন নিশ্চিত করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাদের পাঠানো হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি অবস্থান করা বিদেশিদের সবাইকে নিবন্ধন করার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হবেন, তারা আর্থিক জরিমানা ও কারাদণ্ডের মুখে পড়বেন বলে সতর্ক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এক্সে একটি পোস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বিদেশি যারা যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আছেন, তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন না করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে ভোগ করতে হবে আর্থিক জরিমানা ও কারাদণ্ড।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় লিখেছে, অবৈধ অভিবাসীর প্রতি তাদের স্পষ্ট বার্তা হলো– যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ুন এবং স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র কর মকর ত র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ