পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আশিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসপাতালের ইমারজেন্সি ও আইসিইউতে ডাক্তার না থাকায় ভর্তির ৪০ মিনিট পর আশিকের চিকিৎসা শুরু হয়। এ কারণে তিনি মারা গেছেন।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, “শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আট সদস্যের তদন্ত কিমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

রোগীকে ‘ভুল ইনজেকশন’: হাসপাতালের কনসালটেশন বিভাগ বন্ধ

চীনের অর্থায়নে ১০০০ শয্যার হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবি

এদিকে, ঘটনার পরপরই হাসপাতাল প্রঙ্গণে যান পবিপ্রবির ভিসি ড.

কাজী রফিকুল ইসলাম, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন ও পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা। তারা রাত ৯টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। 

শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার দুপুরে আশিক বন্ধুদের নিয়ে দুমকি জনতা কলেজ পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যান। বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দুমকি হাসপাতালে ও পরে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের ইমারজেন্সি ও আইসিইউতে কোনো ডাক্তার না থাকায় ভর্তির ৪০ মিনিট পরে তার চিকিৎসা শুরু হয়। সন্ধ্যায় চিকিৎসক আশিককে মৃত ঘোষণা করেন। 

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. হেমায়েত জাহান বলেন, ‍“মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।”

এ বিষয়ে জানতে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজার ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মো. খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “আমাকে প্রধান করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমার মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করব।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তদন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ