সেই বিরল খনিজই চীনের লড়াইয়ের হাতিয়ার
Published: 16th, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ঠিক এক বছরের মাথায় চীনের প্রেসিডেন্ট তার বুদ্ধিদীপ্ত খেল দেখিয়েছিলেন। তিনি চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শিল্পনগরী গানঝোতে এক উচ্চ পর্যায়ের সফর করেন। সেখানকার কারখানায় তৈরি হওয়া ধাতব পাত হাতে নিয়ে বলে ওঠেন ‘এটাই এখনকার পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদ’। আর এই পাত বিশেষ ‘রেয়ার আর্থ’ বা বিরল খনিজ (মৃত্তিকা ধাতু) দিয়ে তৈরি, যার উৎপাদন চীনেই সর্বোচ্চ।
শি যখন এই চ্যালেঞ্জের কথা ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বাঘা বাঘা নেতা। এখন নতুন করে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, সেই লড়াইয়ে রেয়ার আর্থের তৈরি ধাতবই আসল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
বিরল ওই মাটি দিয়ে যেমন তেমন জিনিস তৈরি হয় না। এই মাটি দিয়ে এমন সব যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায়, যেগুলো উন্নত প্রযুক্তিগত পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেগুলো আইফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যানবাহনে ব্যবহার করা সম্ভব। যা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে বদলে দিতে সক্ষম। শুল্কের বিপরীতে এটি এমন একটি খাত, যেখানে ট্রাম্প প্রতিশোধমূলক কোনো কৌশলই কাজে লাগাতে পারবে না।
চীনের সেই বিরল মাটিতে ১৭টি উপাদান রয়েছে, যা স্বর্ণের চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় চীনে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই এই মাটি পাওয়া গেলেও পরিমাণে চীনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া এগুলো উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এমনকি পরিবেশগত দূষণের ঝুঁকি রয়েছে।
কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ চীনের এই প্রক্রিয়াজাত ধাতব পদার্থের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) মতে, বিশ্বব্যাপী খনি থেকে উৎপাদিত এই বিরল মাটির ৬১ শতাংশই চীনে পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে এই খাতে চীনের নিয়ন্ত্রণ উৎপাদনের ৯২ শতাংশ।
বছরের পর বছর ধরে গোপনভাবে চীন এই খনিজ উৎপাদনে মনোযোগ দিয়ে এসেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে চীন মূল্যবান এই খনিজের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নতুন নিয়ম অনুসারে, সাত প্রকার খনিজ মাটিও এ থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে হলে সব কোম্পানিকে চীন সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
বিরল মাটি থেকে উৎপাদন হয় এক প্রকার চুম্বক, যা স্মার্টফোন, গাড়ি ও জেট ইঞ্জিন এবং এমআরই মেশিনে ব্যবহৃত হয়। এমনকি এই চুম্বক যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে পারমাণবিক সাবমেরিন এবং অন্যান্য বড় অস্ত্র তৈরির অপরিহার্য উপাদান।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও জননীতির অধ্যাপক জাস্টিন ওলফার্স বলছেন, এভাবেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে। ঠিক যেখানে আঘাত করলে আমেরিকান শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে, ঠিক সেখানেই আঘাত করতে সক্ষম চীন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিরল ওই খনিজ উপাদান মজুদের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানি সিএনএনকে জানিয়েছে, তার এই খনিজের উৎপাদন সম্প্রসারণে মনোযোগ দিয়েছে এবং উপকরণ সংগ্রহে অংশীদারদের কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল চাহিদা অনুযায়ী শিল্প চাহিদা মেটানোর মতো উৎপাদন আনতে বছরের পর বছর লেগে যাবে।
রপ্তানিতে স্থগিতাদেশ
বেইজিং আপাতত বিরল খনিজ মাটি রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। রেয়ার আর্থ ম্যাগনেটবিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান জেওসির প্রতিষ্ঠাতা জন ওরমেরড সিএনএনকে বলেন, শুল্ক আরোপের পর থেকে অন্তত পাঁচটি আমেরিকান ও ইউরোপীয় কোম্পানির তৈরি বিরল মাটির চুম্বকের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রেয়ার আর্থের সিইও জোশুয়া ব্যালর্ড বলেন, বিশ্বব্যাপী বিরল মাটি রপ্তানির ৯৮ শতাংশ চীন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কঠিন ও ব্যয়বহুল। চীন এখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমেরিকান কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে। সরবরাহ পেতে হলে এখন চীন সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। চীন ইতোমধ্যেই এই খনিজের রপ্তানি স্থগিত করেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এই খনিজের মজুত বেশি নেই। এখানে চীনই বড় খেলোয়াড়ের ভূমিকায়। অন্যান্য পণ্যের শুল্কের ক্ষেত্রে চীন খুব বেশি প্রভাব খাটাতে না পারলেও বিরল খনিজ মাটিতে অবশ্যই তারা প্রভাব ফলাতে পারবে।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক খনিজ ও ধাতব সরবরাহকারী সংস্থা জিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক থমাস ক্রুয়েমার বলেন, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এখন শুধু একক পণ্যে নয়, সংকর ধাতুর উপাদান রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়া করতে রপ্তানিকারকদের অনেক সময় লেগে যাবে।
দশকের পর দশক ধরে ‘বিরল মাটি’ তুলছে চীন
চীন ১৯৫০-এর দশকে বিরল মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে এই শিল্পটি প্রকৃত অর্থে বিকশিত হওয়ার পর্যায়ে আসে।
রেয়ার আর্থ অ্যান্ড ম্যাগনেটিকসের পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান স্পন্টেনিয়াস ম্যাটেরিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা স্ট্যান ট্রাউটের মতে, যেতেতু আগে থেকেই চীন এই বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাত করে আসছে, সেহেতু তারা এতে এখনকার তুলনায় কম খরচেই করেছে। তাছাড়া বর্তমানের মতো আগে পরিবেশগত মান যাচাই এত জটিল ছিল না। সময়ের সঙ্গে তারা এই কাজে উন্নতিও করেছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক প্রযুক্তিগত সহায়তা তারা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা ইউরোপ থেকে পেয়েছে। এখন সেই প্রযুক্তিও তারা নিজেরা রপ্ত করে নিয়েছে। বিরল খনিজের কৌশলগত গুরুত্ব তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল।
১৯৯২ সালে মঙ্গোলিয়ায় একটি রেয়ার আর্থ উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলেন তৎকালীন চীনা নেতা দেং জিয়াওপিং। তখনই তিনি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেল আছে; আর আমাদের আছে বিরল খনিজ মাটি। তার এই বক্তব্য তখনই বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আজ চীন দেংয়ের সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখাচ্ছে।
রেয়ার আর্থ ম্যাগনেটবিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান জেওসির প্রতিষ্ঠাতা জন ওরমেরড মনে করেন, আগে এই শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রেই। কিন্তু চীনারা যখন স্বল্প খরচে সেগুলো উৎপাদন করতে শুরু করল, তখনই শিল্পটি চীনে স্থানান্তরিত হয়ে গেল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা জ্ঞানগত শক্তি প্রয়োগ করতে পারিনি, যা চীন পেরেছে।
চলতি বছর মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরল মাটির আমদানির ৭০ শতাংশই চীন থেকে করা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ দুইই আছে যুক্তরাষ্ট্রের
চীন এই প্রথমবার শিল্পের আধিপত্য কাজে লাগাচ্ছে তা নয়। ২০১০ সালে দেশটি আঞ্চলিক বিরোধের কারণে প্রায় দুই মাস জাপানে বিরল মাটির চালান বন্ধ রাখে। তাছাড়া ২০২৩ সালের শেষের দিকে বেইজিং এই খনিজ নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
২০২০ সাল থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দেশীয় বিরল মাটি উৎপাদন ব্যবস্থা স্থাপনে ব্যয় করে ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে তারা দেশীয়ভাবে খনিজ চুম্বকের শতভাগ চাহিদা নিশ্চিতে কাজ করছে। সেক্ষেত্রে চীনের বাইরে অন্যান্য দেশ মিলে সরবরাহ লাইন তৈরি করে চীনকে চাপে ফেলার কৌশল নিতে চায় দেশটি।
টেক্সাসে বিরল মাটির একটি চৌম্বক কারখানা তৈরি হয়েছে। এর লক্ষ্য বার্ষিক পাঁচ হাজার টন চুম্বক উৎপাদন করা। প্রতিষ্ঠানটির সিইও ব্যালার্ড বলেন, চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকার সব খনিজ আমাদের রয়েছে। আমাদের সেগুলো উন্মুক্ত করতে হবে। প্রশ্ন হলো আমরা দ্রুত সেটা কীভাবে করব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র য় র আর থ অন য ন য চ ম বক উপ দ ন উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
দিনমজুর আবুল কালাম অপেক্ষা করছিলেন মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে, তখন অন্তত একটি ইলিশ কিনবেন। বড় আকারের না হলেও ছোট-মাঝারি সাইজের দু–একটি ইলিশ কিনে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে তুলে দেবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি তাঁর, হবে বলেও আর মনে করেন না।
গত রোববার রাতে বরিশাল নগরের চৌমাথা বাজারে বারবার ইলিশের ডালার দিকে তাকাচ্ছিলেন কালাম। কখনো ক্রেতার দিকে, কখনো বিক্রেতার দিকে তাকান। আবার হাঁটতে হাঁটতে ইলিশের দিকে অসহায় চোখে চেয়ে থাকেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘ক্যামনে কিনমু, জাটকার দামই তো ১ হাজার ২০০ আর বড়গুলার গায় তো হাতই ছোয়ান যায় না। কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই।’
শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালেও নেই ইলিশ। চৌমাথা বাজারে কালামের আক্ষেপের কথা শোনার সময় পাশে ৩ হাজার ২০০ টাকায় ৮০০ গ্রামের দুটি ইলিশ কিনলেন এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বললেন, ‘দুই মাসের অপেক্ষার পর এই প্রথম দুইটা ইলিশ কিনলাম। সিজন যায় যায় তবু স্ত্রী, বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে পারিনি। মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কষ্ট হলেও কিনলাম আর কি!’
ইলিশের মৌসুম এখন শেষের পথে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুচক্রেও এসেছে অস্থিরতা। আষাঢ়-শ্রাবণের বদলে বৃষ্টি নেমেছে শরতে, ইলিশের মৌসুমও সরে এসেছে শরতের দিকে। কদিন আগেই উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া আর প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল। সঙ্গে ছিল মধু পূর্ণিমার জোছনা। স্থানীয় জেলেদের বিশ্বাস, এই আবহাওয়ায় গভীর সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বেরিয়ে আসে। সেই সুযোগে ভরে ওঠে জেলেদের জাল। ভাদ্রের মধুপূর্ণিমা তাই প্রতিবছরই জেলেদের জন্য বিশেষ সময়। তবে কয়েক বছর ধরে আর আগের মতো সেই ‘ইলিশের মচ্ছব’ দেখা যায় না।
মৌসুমে ইলিশ বাজারে এলেও দাম থাকে আকাশছোঁয়া। মূল্যস্ফীতির চাপে যখন সাধারণ মানুষের ডালভাতেই টানাপোড়েন, তখন ইলিশ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে ক্রেতাদের প্রশ্ন, মৌসুমেও কেন ইলিশের দাম এত বেশি?
বরিশালের খুচরা বাজারে জুন থেকেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছিল। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে (শ্রাবণ-ভাদ্র) সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। জুনেও ১ কেজির ওপরে ইলিশ ছিল ৩ হাজার টাকা, ১ কেজির ইলিশ ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সরবরাহ বাড়ার পরও দাম একই।
কেন বাড়তি দামক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, মূলত পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে। জেলে থেকে পাইকার, আড়তদার হয়ে মোকাম, এরপর খুচরা বিক্রেতা—প্রতিটি ধাপে কমিশন ও লাভ যোগ হয়। এতে শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপর পড়ে বাড়তি বোঝা। তবে পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, আগের মতো এখন আর ইলিশের সরবরাহ নেই। সেই সঙ্গে আহরণের ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়েছে। এতে দাম কমার সুযোগ নেই।
বরিশালের পোর্ট রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী জহির সিকদার বলেন, সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। আসলে মাছই কম ধরা পড়ে। বড় ইলিশ তো একেবারেই কম। আর ব্যয়ও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
পোর্ট রোডের বাজারে আজ পাইকারি পর্যায়ে ১ কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৮৬ হাজার টাকায়, ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৭৬ হাজার টাকায়, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৬০ হাজার টাকায় এবং ১ কেজির ওপরে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার টাকায়।
আহরণের ব্যয় দ্বিগুণমৎস্য খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সমুদ্রগামী মৎস্য খাত সংকটে পড়েছে। ট্রলার পরিচালনা, জেলেদের খোরাকি, বরফ, মজুরি—সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ফলে আহরিত মাছ বিক্রি করে ব্যয় তোলা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজেলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১১৪ টাকা। বর্তমানে সরকারি দর ১০২ টাকা হলেও স্থানীয় বাজারে লিটারপ্রতি ১০৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৬৫ টাকা। ফলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ।
পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মালিক জাহাঙ্গীর খান জানান, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে তাঁর ট্রলারে ১৯ জন মাঝি-জেলে থাকেন। ট্রলারটিতে জ্বালানি তেল লাগে ১২ ব্যারেল। শুধু জ্বালানি তেলের খরচ হয় ২ লাখের বেশি। ইঞ্জিন অয়েল ১২ হাজার ৫০০ টাকা, বরফ ৬৫ হাজার টাকা, জেলেদের ১০ দিনের বাজারসদাই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যন্ত্রাংশ ২০ হাজার, ওষুধ ৫ হাজার, খাবার পানি ২ হাজার, অন্যান্য খাতে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে একটি ট্রলার পাঠাতে খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা।
জাহাঙ্গীর খান বলেন, এই খরচ তোলার জন্য অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এখন কখনো ২ লাখ, কখনো ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রি করা যায় না। অগভীর সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলোর ব্যয়ও বেড়েছে। পাথরঘাটার আরেক মালিক মোহাম্মদ সেলিম জানান, বর্তমানে একটি ট্রলারে জ্বালানি তেল লাগে ২ ব্যারেল মানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা, ইঞ্জিন অয়েল ৫ হাজার টাকা, বরফ ১৫ হাজার টাকা, বাজার সদাই ৭০ হাজার টাকা, যন্ত্রাংশ ৫ হাজার টাকা, ওষুধ-পানি ২ হাজার এবং অন্যান্য খরচ ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আগে ব্যয় হতো ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। এই ব্যয় তুলে লাভ করা এখন খুব কষ্টকর। এ জন্য বাজারে ইলিশের দাম চড়া।