পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ফসলের মাঠ থেকে আট বছরের এক মেয়েশিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে শিশুটির মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে চাটমোহর থানায় মামলাটি করেছেন। তবে এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শিশুটির শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।

মারা যাওয়া শিশুটির বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঁন্দাই ইউনিয়নে। মেয়েটি স্থানীয় মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণিতে পড়ত। গত সোমবার বিকেলে দাদাবাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সে। সেখানে কিছুক্ষণ খেলাধুলার পর সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। গতকাল দুপুরে পাবনা ও নাটোরের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের ভুট্টাখেতে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়।

যোগাযোগ করা হলে শিশুটির মা বলেন, কেন, কারা তাঁর মেয়েকে কী কারণে হত্যা করেছে, তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। তবে যারাই হত্যা করুক, তিনি তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান, নারী পুলিশ সদস্যরা শিশুটির সুরতহাল করেছেন। প্রাথমিকভাবে মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে মেয়েটির মুখে কয়েকটি ফুসকুড়ি দেখা গেছে। এটা গরম পানি অথবা দাহ্য কোনো পদার্থ দিয়ে হতে পারে। আজ দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মেয়েটির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।

ওসি মঞ্জুরুল আলম বেলা ২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলেই আছি। বিভিন্ন ক্লু ধরে মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই হত্যাকারীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

সহযোগিতার আশ্বাস তারেক রহমানের

হত্যা মামলাটি পরিচালনার জন্য শিশুর পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভুক্তভোগী পরিবারকে তাৎক্ষণিক তাঁর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল কাদের মিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার সকালে নিহত শিশুর বাড়িতে যান। তাঁরা তারেক রহমানের সহমর্মিতা পৌঁছে দেন। আবদুল কাদের মিয়া বলেন, এই নির্মম ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারে বিএনপি সার্বিক সহযোগিতা করবে।

আরও পড়ুননিখোঁজের পরদিন শিশুর মুখ ঝলসানো লাশ উদ্ধার১৫ এপ্রিল ২০২৫

এদিকে শিশুটির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নাটোরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার দুপুরে নাটোর শহরের কানাইখালী চত্বরে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের সময়সীমা বেঁধে দেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাটোর জেলা শাখার আহ্বায়ক শিশির মাহমুদ বলেন, সাত বছরের শিশুর উদ্ধার হওয়া মরদেহ দেখেই অনুমান করা যায় ঘটনাটি কত নিষ্ঠুর। ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করার পর তাকে গলা টিপে হত্যা করে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। এই জঘন্য অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। একই দাবিতে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া শহরেও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন