পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিভাজন হতে দেব না, বললেন মমতা
Published: 16th, April 2025 GMT
ভারতের ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে যখন উত্তাপ ছড়িয়েছে, সেই সময় রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বন্ধন দৃঢ় এবং সুদীর্ঘ দিনের।’
ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন বাতিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে গত কয়েক দিন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সে অবস্থায় আজ বুধবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এক সভা ডাকা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। সেখানেই মমতা এ কথা বলেন।
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই সম্প্রীতিকে ওরা ভাঙতে পারবে না।’
আজ বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘ওরা মেরুকরণ করে বাংলার ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই বিজেপির প্ররোচনায় কান দেবেন না। বিজেপির জনবিরোধি আইন আমরা সংবিধান সংশোধন করে পাল্টে দেব। অপেক্ষা করুন। আগামী এক বছর ধৈর্য ধরতে হবে। এরপর অনেক পরিবর্তন হবে দিল্লিতে।’
মমতা বলেন, ‘আবার নতুন সরকার হবে। যেদিন বিজেপি ক্ষমতা থেকে চলে যাবে, যে আইন জনবিরোধী করেছে, সেই আইন বদলাতে হবে। যদি সংকট সৃষ্টি হয়, আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
ওয়াক্ফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সহিংসতা হয় বেশি।
মুর্শিদাবাদের সহিংসতা প্রসঙ্গে আজ মমতা বলেন, ‘বিজেপি কেন বাইরে থেকে লোক এনে এখানে গন্ডগোল পাকাবে? কেন এজেন্সির মাধ্যমে অশান্তি লাগাবে? আমি জেনেছি, বাচ্চা ছেলেদের হাতে ৫–৬ হাজার টাকা দিয়ে ইট ছোড়া হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে কাদের ঢোকানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখব।’
মমতা বলেন, ‘আইন বাতিলের দাবি তুলুন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দরবারে। আমরা যুগ যুগ ধরে এই রাজ্যের মানুষকে একসঙ্গে রেখেছি। আমাদের ওপর ভরসা রাখুন, এই রাজ্যে আমরা হিন্দু–মুসলমান একসঙ্গে থেকেছি, একসঙ্গে থাকব, আমাদের সম্প্রীতির এই মিলন–বন্ধন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, চলবে। বিজেপি ফাটল ধরাতে পারবে না।’
মমতা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার আরজি জানান। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে রাস্তায় না করে বদ্ধ জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করুন। প্রয়োজনে দিল্লিতে গিয়ে প্রতিবাদ করা হোক।’
মমতা বলেন, ‘আজ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আর অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু মুখ বন্ধ করে আছেন। পরিকল্পনা করে দাঙ্গা করানো হয়েছে। আর এর জন্য পুরোটা দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা বলেন, ‘আমরা এই বাংলাকে রক্তাক্ত করতে দেব না। এখন দেশের সব এজেন্সি তো অমিত শাহর হাতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন এজেন্সি নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন ব
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।