ফা রু ক ন ও য়া জ
বৃথাই খুঁজে ফেরা
চাঁদের বাটি উথলে পড়া আলোয় আমি
জোছনারাতের চাঁদদিঘিটা খুঁজি
বুঝি আমি, ভালো করেই বুঝি
সেই দিঘিটা পাবো না আর যতোই খুঁজি তারে
আলোর দিঘি হারিয়ে গেছে কালের অন্ধকারে।
জলথইথই ঢেউয়ের দোলা ছোট্টো নদী
সাঁঝ-অবধি মন নাচাতো আমার
পাড়ের ওপর শস্যঝাড়া খামার
খামারঘেঁষা মৈঠালি পথ খুঁজে বেড়াই আমি
বৃথাই খোঁজা; খোঁজার নেশা মিছে এ পাগলামি!
ক্যাঁচক্যাঁচানো গরুর গাড়ি মাটির পথে
হাটের দিনে কড়কড়ানো দুপুর
মাঝ-আকাশে সূর্য তখন উপুড়
পথের পাশে বটের ঝুড়ি দুলদুলুনি খেলা
হারানো সেই গাঁয়ের ছবি খুঁজতে ফুরোয় বেলা।
হাঁটতে হাঁটতে থমকে যাওয়া দখিনবনের
ঘুঘুর ঘু-ঘু মনউচাটন ডাকে
পরান কেমন উদাস হয়ে থাকে
হন্যে হয়ে সেই উদাসী দিনকে খুঁজি শুধু
বৃথাই খোঁজা; নিরাশ হয়ে মনটা করে ধু-ধু!
অ ঞ্জ ন মে হে দী
বাবার ছবি
আকাশ পানে তাকিয়ে থাকি দূরের ছায়াপথে
দু’হাত তুলে ডাকি যখন বাবা তোমার নামে
দিদুন বলে বাবা নাকি দূরের কোনো তারা
সত্যি কি তাই? চিঠি পাঠাই জানতে সবুজ খামে!
জোনাক জ্বলা রাতের বেলা যখন গোটা পাড়া-
ঘুমিয়ে থাকে চুপটি করে পুতুল মণির মত
মায়ের চোখে সাগর-নদী-ঝর্ণা জলের ধারা
জায়নামাজের উদার জমিন ভিজছে অবিরত।
ছোট্টবেলায় হোঁচট খেলে কিংবা জ্বরের ঘোরে
যখন আমি ঘুমের দেশে ভীষণ কেঁপে উঠি
সেই দিনরাত মায়ের মতো আমার কপাল ভূমি
স্নেহমাখা তোমার আঙুল করতো লুটোপুটি!
তোমার কাছে প্রথম শিখি বর্ণমালা পড়া
চাঁদের দেশে চাঁদের বুড়ির গল্পটা ফিসফিস
তোমার নামে রাত পোহালে আবার রূপোর ভোরে
সজনে ডালে দোয়েল পাখি আজও বাজায় শিস।
কোন দুয়ারে তোমায় ডাকি, কোন পথে যে খুঁজি?
বাবা ছাড়া বিশ্বভূবন সত্যি লাগে ফাঁকা
রইলো পড়ে তোমার সকল চশমা হাতের ঘড়ি
বুকের ভাঁজে সোনা রঙে তোমার ছবি আঁকা।
আ খ তা রু ল ই স লা ম
বিশাল আকাশ
আমাদের আছে বিশাল আকাশ আকাশের বুকে তারা
তারারা আমার খুব প্রিয় তাই, হই আমি দিশেহারা।
আকাশের গায়ে নীলের চাদরে মেঘদের ছবি আঁকা
মেঘ মেদুরের ছবিগুলো কত রঙবেরঙের মাখা।
মেঘেরা আমার কবিতার কথা পৃথিবীটা যেন ঘুরে
সীমানা পেরিয়ে ছুটে চলে ওই হাওয়ার রোদ্দুরে।
আকাশটা কত ছায়া মায়া দেয়, দেয় ভালোবাসা সুখ
গ্রহ নক্ষত্র হাতছানি দেয় হই আমি উন্মুখ।
সাদা কালো কত স্বপ্নেরা ডাকে, ডাকে যে পাহাড় নদী
সময়ের স্রোতে ঘুরে ফিরে আসে হারায় নিরবধি।
মেঘে মেঘে আমি খুঁজি যেন ওই আকাশের বিশালতা
মনটা তখন মন থাকে না রে পাই কত স্বাধীনতা।
কখনো কখনো কালো মেঘে ছেয়ে নীরবে আকাশ কাঁদে
নীল কষ্টের বৃষ্টির জলে মাটিতে মিতালি বাঁধে।
ঝলমলে রূপ সোনালি আকাশে মেঘরোদ্দুরে খেলা
আমাকে শেখায় দুখেতে হাসতে ঝরঝরে সারাবেলা।
আমার আকাশ পৃথিবী জুড়েই দিচ্ছে বিশাল ছাতা
ছাতার ভেতরে আমরা মানুষ রেখেছি সবার মাথা!
মা লে ক মা হ মু দ
আমের ছড়া
রাত হলো নিঝুম
চোখ জুড়ে আয় ঘুম
ঝড় নেই নেই ঝড়
গাছে আম পাকছে
পাখিরাও আম খেতে
একে ওকে ডাকছে
ধুপ ধুপ পড়ে আম
যেই কানে শুনছি
তাড়াতাড়ি ভোর হও
প্রহর তো গুনছি!
দুই.
আয় ঝড় আয় রে
মন ছুটে যায় রে
জোরে তুলি হাই রে
আম খেতে চাই রে
গাছতলা দাঁড়িয়ে
ভাবনাটা নাড়িয়ে
আছি হাত বাড়িয়ে
তাড়াতাড়ি আয় ঝড়
আম পড় আম পড়!
প্র জী ৎ ঘো ষ
গাজার শিশু
আমরা যারা গাজার শিশু
কাঁদি অনাহারে;
বিশ্ব বিবেক আবেগ দিয়ে
সইতে কি তা পারে?
আমরা যারা গাজার শিশু
উঠছি ভয়ে কেঁপে;
বিশ্ব বিবেক কম্পিত কি
সেই তরঙ্গ মেপে?
আমরা যারা গাজার শিশু
হচ্ছি গুলিবিদ্ধ;
এই ঘটনায় কারো হৃদয়
হচ্ছে না কি ঋদ্ধ?
আমরা যারা গাজার শিশু
এতিম অভাজন;
কে দেখাবে পথ আমাদের
কে বা ইশান কোণ?
আমরা যারা গাজার শিশু
চিকিৎসাহীন প্রাণ;
কে শোনাবে মানবতার
সুস্থ করার গান?
আমরা যারা গাজার শিশু
বোমার সাথে খেলি;
চিনি না কি জুঁই চামেলী
চিনি না রোজ, বেলী।
আমরা যারা গাজার শিশু
নিরুপায় নির্বাক;
বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হোক
এ খেলা মুক্তিপাক।
কোন্ কারণে এই বলিদান
কোন্ কারণে ধ্বংস;
কোন্ কারণে হৃদয় কাঁদে
যায় উড়ে বুনো হংস।
আমরা যারা গাজার শিশু
হে খোদা! দয়াময়;
আমাদের তুমি রক্ষা করো
তোমারই হবে জয়।
আমরা যারা গাজার শিশু
অবুঝ কচি প্রাণ;
মাতৃভূমির তরে জীবন
যাচ্ছি করে দান।
আমরা যারা গাজার শিশু
আর যতক্ষণ বাঁচি;
এই চিৎকার, এই হাহাকার
পৌঁছাক কাছাকাছি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫