রাজশাহীর সাগরপাড়া কাঁচাবাজারের ড্রেনে বড়শি ফেলে ১০ কেজি ওজনের একটি মাগুর মাছ ধরেছেন স্বাধীন (২২) নামের এক যুবক। তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু শাকিব পেয়েছেন আরও একটি মাগুর মাছ, যার ওজন সাড়ে সাত কেজি। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁরা মাছ দুটি ধরেন।

স্বাধীন পেশায় একটি মোটরগাড়ির গ্যারেজের কর্মচারী। তিনি থাকেন নগরের সাগরপাড়া মাছুয়া এলাকায়। তাঁর বন্ধু শাকিব (২১) একটি মুরগির দোকানে কাজ করেন। ড্রেন থেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় তাঁদের সঙ্গে আরও ১০-১২ জন তরুণ ছিলেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কয়েক বছর আগে মাছের পোনাভর্তি একটি ভ্যান উল্টে যায়। পোনাগুলোর একাংশ পড়ে যায় কাছাকাছি ড্রেনের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে মুরগি ও মাছের দোকানগুলোর ড্রেনে ফেলা বর্জ্য খেয়ে এসব মাছ বড় হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।

সাগরপাড়া কাঁচাবাজার এলাকায় প্রতিদিন সকালে ড্রেনের ওপর বসে বাজার। এসব ড্রেন স্থায়ীভাবে নির্মিত এবং মাঝে মাঝে স্ল্যাব উঠিয়ে পরিষ্কারের ব্যবস্থা আছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন যুবক স্ল্যাব সরিয়ে উপুড় হয়ে বড়শি ফেলে মাছ ধরছেন।

স্বাধীন বলেন, মাছ ধরার সময় বড়শি টেনে তুলতে না পেরে একপর্যায়ে ড্রেনে নেমে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁর হাত-পা ছিলে যায়। পরে মাছটি বাসায় নিয়ে রাখেন। তাঁর মাছুয়াপাড়ার বাড়িতে গিয়ে বড় পাতিলে রেখে দেওয়া মাছ দুটি দেখা যায়।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন শাকিবের মা সাইদা জিয়াসমিন সাগরী। ছেলের ধরা মাছ দেখে তিনি বলেন, ‘কী বুলবো, খুবই আনন্দ হইছে। এত আনন্দ হইতেছে যে বুইলতে পারতেছি না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ড্রেনের পানির স্তর কমে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে ড্রেনের ভেতর নড়াচড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। গত বুধবার প্রথমবার স্ল্যাব সরিয়ে কয়েকটি বড় মাগুর মাছ দেখা যায় এবং বড়শি ফেলে চারটি মাছ ধরা পড়ে। এরপর বৃহস্পতিবার আরও তিনটি মাছ ধরা হয়। শুক্রবার রাতে বড় মাছ পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আরও অনেকেই ড্রেনে বড়শি ফেলে মাছ ধরতে ভিড় করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ