হজম ক্ষমতা বাড়াতে মেনে চলুন কিছু টিপস
Published: 19th, April 2025 GMT
অনেকেরই হজমের সমস্যা আছে। হালকা খাবার খেলেও তারা হজম করতে পারেন না । যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা কিছু টিপস মেনে চলতে পারেন। এর পাশাপাশি কিছু খাবার খেলেও হজমের সমস্যা কমবে।
হজমের সমস্যা কমাতে কী করবেন
প্রাণায়ম : প্রতিদিন প্রাণায়াম করার চেষ্টা করুন। এতে হজম ক্ষমতা ভালো থাকে। অন্ত্রে অক্সিজেন পৌঁছাবে। এতে হজম শক্তি বাড়ে এবং হজমের কোনও সমস্যা থাকলে তা কমে যাবে।
আদা চা: আদা চা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেটের সমস্যা কমাবে, এমনকি হজম ক্ষমতাও বাড়াবে।
এই সময়ে ভারী খাবার খাবেনন না: দুপুর বারোটা থেকে দুইটার মধ্যে ভারী খাবার খাবেন। এরপর ভারী খাবার খাবেন না। এতে আপনার হজমশক্তি কমতে থাকবে। খাবার ভালো হজম করতে পারবেন না। রাতের দিকে অবশ্যই সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই হালকা খাবার খাবেন।
পুদিনা পাতার চা : খাবারের পর পুদিনা পাতার চা খান। এতে শরীর সুস্থ থাকে। হজমের যেকোনও সমস্যা কমে। পুদিনা চা খেলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকবে। পেট ফাঁপা, গ্যাস, হজমের সমস্যা, বদহজমের সমস্যা কমবে, শরীর সুস্থ থাকবে।
তাড়াতাড়ি খাবেন না: কোনও খাবার তাড়াতাড়ি খাবেন না। এতে আপনার ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজম ক্ষমতাও কমতে থাকবে। যখনই খাবার খান ধীরে ধীরে খাবেন । তবে চিবিয়ে খাবার চেষ্টা করুন। এতে খাবার ভালোভাবে হজম করতে পারবেন।
কোন খাবার খেলে হজমশক্তি বাড়বে-
দই : দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এই খাবার হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পেটের কোনো সমস্যা থাকলেও কমে।
আদা : আদা আদাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকে, তাই আদা খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমবে।
কলা: কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা আপনার অন্ত্র ভালো রাখতে সহায়তা করে। এমনকি অন্ত্র ভালো রাখতেও প্রতিদিন কলা খেতে পারেন।
মৌরি বীজ: মৌরি বীজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হজম ক্ষমতা বাড়াবে।
ওটস: হজমের সমস্যা কমাতে ওটস খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি অন্ত্রের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি গ্যাস, অম্বলের সমস্যাও কমায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হজম র সমস য হজম র সমস য হজম ক ষমত অন ত র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি।
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি।