বাড়ি তাদের সুবর্ণচর, তরমুজ চাষ করেন মিরসরাইয়ে
Published: 19th, April 2025 GMT
কৃষক সিরাজুল ইসলামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি ২০২২ সালে প্রথম মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নের চরে তরমুজ চাষ করেন। তিনি একাই ৫৮ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। গত ৩ বছরে সিরাজুলের সাফল্য দেখে সুবর্ণচর থেকে ইছাখালীতে তরমুজ চাষের জন্য ছুটে আসেন শতাধিক কৃষক। চলতি বছর মিরসরাইয়ের ৪ ইউনিয়ন ইছাখালী, মায়ানি, মঘাদিয়া ও সাহেরখালীতে কৃষি অধিদপ্তরের হিসাবে ৪৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তবে চাষিদের দাবি বলছে ভিন্ন কথা। চাষিদের দাবি, তরমুজ আবাদ এক হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। এখন যেদিকে চোখ যায় সেদিকে তরমুজের সমারোহ। বর্তমানে মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলের ক্ষেত থেকে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক তরমুজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সুবর্ণচর এলাকার চাষিরা শুধু নিজেই আসেননি, তরমুজ ক্ষেতে কাজ করার জন্য নিজেদের এলাকা থেকে প্রায় তিন হাজার শ্রমিকও নিয়ে এসেছেন। তারা গোটা মৌসুম তরমুজ ক্ষেতে কাজ করেন।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ে যারা বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করছেন তাদের সবার বাড়ি নোয়াখালী সূর্বণচর এলাকায়। আগে সুবর্ণচর এলাকায় ব্যাপকহারে তরমুজ চাষ হলেও বর্তমানে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখন আর ওই উপজেলার আবহাওয়া তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী নয়। তাই চাষিরা মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ করছেন। আমন ধান কাটার পর কৃষকদের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে তরমুজ চাষ করেন সুবর্ণচরের কৃষকরা। এক একর জমির ইজারা মূল্য ১৫-১৬ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে মিরসরাইয়ে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু হয়। ওই বছর প্রায় ৫৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু হয়। ওই বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে দেখে ২০২৩ সালে আবাদ দাঁড়ায় ৭০ হেক্টরে। ২০২৪ সালে আরও ১২০ হেক্টর বেড়ে আবাদ হয় ১৯০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৪৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। চলতি বছর তরমুজ আবাদ বেড়েছে ২৯০ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সাহেরখালী ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নে মোট চাষের ৭৫ শতাংশই তরমুজ ক্ষেত। তবে চাষিরা বলছেন, এবার উপজেলায় কমপক্ষে এক হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।
সাহেরখালী চরাঞ্চল এলাকা ঘুরে দেখা যায়.
পূর্ব মায়ানি গ্রামে তরমুজ চাষ করা সূবর্ণচরের চাষি মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ১০ জন মিলে ৩০ কানি জমি ইজারা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছি। প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করেন মোট ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। মিরসরাইয়ের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী বলে ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে তরমুজ বিক্রি থেকে খরচের টাকা উঠে এসেছে। ভাল লাভ হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাষি জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এবার তরমুজ চাষিদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কোথাও কোথাও তরমুজের ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষেত থেকে প্রভাব দেখিয়ে কেউ কেউ ইচ্ছেমতো তরমুজ নিয়ে গেছেন।
মিরসরাই কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘চলতি বছর উপজেলার নতুন দুই ইউনিয়নে তরমুজের আবাদ হয়েছে। চরাঞ্চল তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ধীরে ধীরে চাষ বাড়ছে। তরমুজ চাষ করে কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছেন, যা বোরো চাষে পাওয়া যায় না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তরম জ তরম জ ক ষ ত র উপজ ল র চ ষ হয় ছ তরম জ র ম রসর ই র এল ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।