সাধারণ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ও গণভোট এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনে শক্ত আপত্তি আছে বিএনপির। তারা এ বিষয়ে কোনো আপসও করবে না। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ এবং রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে চলমান আলোচনায় আজ রোববারের নির্ধারিত আলোচনায়ও বিএনপি এই অবস্থান তুলে ধরবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দলটি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছিল।   

বিএনপি মনে করছে, ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন বাধ্যতামূলক করা হলে নির্বাচিত সংসদের ক্ষমতা কমে যাবে।

আবার সংবিধানের যে কোনো সংশোধনের জন্য গণভোট বাধ্যতামূলক হলে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে।

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারের সংলাপে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, এনসিসি গঠনে তারা রাজি নয়। তবে এ বিষয়ে সেদিন বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আজ এই আলোচনার কথা রয়েছে। 

বিএনপির আশঙ্কা, এনসিসি গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের ক্ষমতা কমে যাবে। আবার সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় উচ্চ ক্ষমতার এই এনসিসির জবাবদিহির কোনো কাঠামো থাকবে না। আবার নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এনসিসি চাইলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করারও সুযোগ থাকবে। 

সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচ কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের মধ্যে– আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষ ও এনসিসি গঠন বড় পরিবর্তন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এই দুই সুপারিশকে মৌলিক সংস্কার মনে করছে এবং তা সমর্থন করছে। জামায়াতে ইসলামীও আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের সুপারিশে একমত। দলটি এনসিসি গঠনেও রাজি। তবে তারা প্রস্তাব করেছে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনসিসি বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে না। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, এনসিসি গঠিত হলে সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে। আবার যখন নির্বাচনকালীন সংসদ থাকবে না, তখন সর্বময় ক্ষমতার এনসিসি রাষ্ট্রের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। তাই বিএনপি এনসিসি গঠনে একমত নয়। তিনি বলেন, আশপাশের কোনো দেশে এমন বিধান নেই। বাংলাদেশেও এমন চর্চা নেই। নতুন করে কিছু চাপিয়ে দিলে তা সমাধানের বদলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে দেশ যখন একটি পর্যায়ে উপনীত হবে, তখন এসব বিষয়ে ভাবা যাবে।

অবশ্য ঐকমত্য কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.

বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় এনসিসি কীভাবে কাজ করবে, তা  সুপারিশে বিস্তারিত বলা আছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে– এ আশঙ্কা অমূলক। প্রশ্ন থাকলে আলাপ-আলোচনার মধ্যে পথ বের করা সম্ভব। কমিশন শুধু রাজনৈতিক দলের মতামত এবং ব্যাখ্যা জানছে এখন। 

সংবিধান সংস্কার 
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ সুপারিশের মধ্যে ১৪টিতে একমত এবং নীতিগতভাবে একমত বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটি ছয়টি সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত পোষণ করেছে। বিএনপি যে সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত নয়, সেগুলো  নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে  আলোচনা করেছে। কেন একমত নয়, তার যুক্তি তুলে ধরে।

কমিশন যেসব সুপারিশের সঙ্গে বিএনপি আংশিক একমত, সেগুলোতে কেন পুরোপুরি একমত নয়, তা জানতে চেয়েছে। বিএনপি কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাকিগুলো আজকের আলোচনায় উঠবে।

সংবিধান সংস্কারের তিনটি সুপারিশের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানানোর কথা বলেছিল বিএনপি। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, রোববারের আলোচনায় বিএনপি একই অবস্থানে থাকবে। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকতে হবে।

যদিও ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেন, প্রাণবন্ত আলোচনা হচ্ছে। বিএনপিকে অনড় মনে হয়নি। তারা প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত মতামত জানাচ্ছেন। কমিশনও কিছু বিষয়ে দলটির মতামতকে গ্রহণ করেছে। 

সংস্কারের সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়েও বড় মতপার্থক্য রয়েছে। কমিশন জানতে চেয়েছিল, সুপারিশ বাস্তবায়নে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। বিকল্প হিসেবে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদে ভোটাভুটি, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার নাকি গণপরিষদ এবং নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে।

বিএনপি সংবিধান সংস্কারের যেসব সুপারিশে একমত ও আংশিক একমত হয়েছে, সেগুলো আগামী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার গঠন প্রক্রিয়াও সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করার পক্ষে তারা।  

২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফায় উচ্চকক্ষের প্রস্তাব রয়েছে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চায় বিদ্যমান পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে যেভাবে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করা হয়, উচ্চকক্ষের আসনও সেভাবে বণ্টিত হবে।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০ দশমিক ৮ এবং আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। এ দুই সংসদে সংবিধানে চতুর্দশ ও পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। 

৪০-৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসন পেয়েছিল দল দুটি। এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সংবিধানের যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া রোধে সংস্কার কমিশন উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধন বিলে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং গণভোট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র সমকালকে বলেছে, সংবিধানকে সুরক্ষা দিতে আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন এবং সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনে বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, এভাবে স্বৈরাচার রোধ করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করলে সংবিধানে যথেচ্ছা বদলের আশঙ্কা থাকে না। সেদিকেই যেতে হবে।

বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে বাকি সব কাজ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে বাধ্য। এর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ স্বতন্ত্র আইনের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে আদতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ীই নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। 
এ একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, উচ্চ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার,  বিরোধী দল থেকে উচ্চ ও নিম্নকক্ষে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার,  প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার বাইরে দল থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নিয়ে ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একই সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও।

সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে। এনসিসি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান এবং তিন বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ করা হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও নিয়োগ হবে এনসিসির মাধ্যমে।

নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে এখনও মতামত জানায়নি বিএনপি। দলটির সূত্র জানিয়েছে, তারা ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল চায়। যাতে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে। দলের একজন নেতা বলেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিএনপি রিভিউ আবেদন করেছে। বিএনপি আশা করছে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরবে। তাই এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ভাবনা তাদের নেই। 

কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদ ভেঙে গেলেও এনসিসি বিলুপ্ত হবে না। নির্বাচনকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার মনোনীত দু’জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের এনসিসি গঠিত হবে।

বিএনপির মূল্যায়ন হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর মনোনীত দুই উপদেষ্টাকে সদস্য করার এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রস্তাবিত এনসিসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবেন অনির্বাচিত ব্যক্তিরা। একে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিএনপি নেতারা। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, অতীতে কী হয়েছে, তা মাথায় রেখে এত নিয়মকানুন লিখে গণতন্ত্র হয় না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে যথাযথ চর্চার মাধ্যমে এগোতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র ব চনক ল ন স স প র শ কর ছ ন উপদ ষ ট র র শ অন য য় র ষ ট রপত প রস ত ব সরক র র র ক ষমত ব যবস থ র মত মত ব চ রপত ব এনপ র সদস য র গণভ ট এনস স অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।

ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’

আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগে

পরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।

খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।

জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনী

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত
  • বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা
  • জুলাই সনদের খসড়া গ্রহণ করতে পারি না: এনসিপি