যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের পর ইরান বলল, ‘ভালো বোঝাপড়া’ হয়েছে
Published: 19th, April 2025 GMT
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেছে ওয়াশিংটন ও তেহরান। শনিবার ইতালির রাজধানী রোমে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। ২৬ এপ্রিল আবার আলোচনায় বসতে পারেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে। এর মধ্যস্থতা করছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমান। সপ্তাহখানেক আগে দেশটির রাজধানী মাসকাটে প্রথম দফার বৈঠক হয়েছিল। ওমান সরকার জানিয়েছে, তৃতীয় দফায় আবার মাসকাটে বৈঠক হবে।
দ্বিতীয় দফার বৈঠকে ‘গঠনমূলক’ পরিবেশ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকেরি বলেছেন, আগামী কয়েক দিন ‘পরোক্ষভাবে’ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ যে আলোচনা এগিয়ে নিতে রাজি, তা নিশ্চিত করেছে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র–ইরান আলোচনা গতি পাচ্ছে এবং যেটা হওয়ার কথা নয়, সেটাও এখন সম্ভব।
বৈঠক যে ভালো হয়েছে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন আব্বাস আরাগচিও। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি বলেছেন, বৈঠক থেকে অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এবারের বৈঠকে বিভিন্ন নীতি ও লক্ষ্যের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আরও ভালো বোঝাপড়া হয়েছে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ কার্যক্রম সীমিত করবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। পরে ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসে আবারও ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগে তৎপরতা শুরু করেন ট্রাম্প। তবে গত মার্চে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লেখা একটি চিঠিতে নতুন করে পরমাণু আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান তিনি। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিফলে গেলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালুসহ ১১টি বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এবি পার্টি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দল দুটি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার পরিবেশ তৈরি হবে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ধর্মবিরোধী, ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী। কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে এবি পার্টিও একমত।
বৈঠক সম্পর্কে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বানানো পর্যন্ত এই ঐক্য টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
দুই দলের বৈঠকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন–সার্বভৌম টেকসই কল্যাণকর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; ভোটাধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা এবং প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা; আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা; দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সংবিধানে বিদ্যমান শরিয়াহবিরোধী আইন বাতিল এবং ইসলামসহ সব ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য পরিহার করা, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো কথা বা বক্তব্য না দেওয়া।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, মাওলানা সৈয়দ এসহাক মু. আবুল খায়ের ও মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম।
অপর দিকে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও বি এস নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান, সংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) গাজী নাসির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।