ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেছে ওয়াশিংটন ও তেহরান। শনিবার ইতালির রাজধানী রোমে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। ২৬ এপ্রিল আবার আলোচনায় বসতে পারেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে। এর মধ্যস্থতা করছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমান। সপ্তাহখানেক আগে দেশটির রাজধানী মাসকাটে প্রথম দফার বৈঠক হয়েছিল। ওমান সরকার জানিয়েছে, তৃতীয় দফায় আবার মাসকাটে বৈঠক হবে।

দ্বিতীয় দফার বৈঠকে ‘গঠনমূলক’ পরিবেশ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকেরি বলেছেন, আগামী কয়েক দিন ‘পরোক্ষভাবে’ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ যে আলোচনা এগিয়ে নিতে রাজি, তা নিশ্চিত করেছে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র–ইরান আলোচনা গতি পাচ্ছে এবং যেটা হওয়ার কথা নয়, সেটাও এখন সম্ভব।

বৈঠক যে ভালো হয়েছে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন আব্বাস আরাগচিও। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি বলেছেন, বৈঠক থেকে অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এবারের বৈঠকে বিভিন্ন নীতি ও লক্ষ্যের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আরও ভালো বোঝাপড়া হয়েছে।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ কার্যক্রম সীমিত করবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। পরে ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসে আবারও ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগে তৎপরতা শুরু করেন ট্রাম্প। তবে গত মার্চে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লেখা একটি চিঠিতে নতুন করে পরমাণু আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান তিনি। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিফলে গেলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি

আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।

‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’

গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’

সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি