স্মারক স্বর্ণ মুদ্রার দর আবারও বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিটি মুদ্রায় ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিটি মুদ্রায় ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দর বৃদ্ধির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়– স্বারক স্বর্ণ মুদ্রার নতুন দর কার্যকর হয়েছে ২০ এপ্রিল রোববার থেকে। অবশ্য স্বারক রৌপ্য মুদ্রার দর ৭ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে তিন ধরনের স্মারক স্বর্ণ মুদ্রা রয়েছে। প্রতিটি মুদ্রা ২২ ক্যারেট মানের ১০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি। এসব মুদ্রা হলো- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ১৯২০-২০২০ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ১৯৭১-২০২১। সাধারণভাবে স্মারক মুদ্রা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল ও অন্যান্য শাখা অফিসে পাওয়া যায়। মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যাদু ঘরেও বিক্রি করা হয়।

সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি স্মারক স্বর্ণ মুদ্রায় ১০ হাজার টাকা বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গতবছর তিন দফায় প্রতিটি মুদ্রায় ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে গতবছরের ১৪ অক্টোবর ও গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতিটি মুদ্রায় ১০ হাজার এবং ১৬ জুলাই ৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। স্বারক মুদ্রার দর এক লাখ টাকা হয় ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর। ওই বছর মোট ৬ দফায় প্রতিটি মুদ্রায় ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

স্বারক স্বর্ণ মুদ্রা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রৌপ্য স্মারক ও কাগুজে স্মারক নোট রয়েছে। বিশেষ দিন বা স্থাপনাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন নোট ছাড়া হয়। বর্তমানে স্বর্ণ মুদ্রার বাইরে ১২ ধরনের স্মারক রৌপ্য মুদ্রা আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী, বাংলাদেশ ব্যাংক রজত জয়ন্তী, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন, বাংলাদেশের ৪০তম বিজয় বার্ষিকী, বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী, আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জয়ন ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘সিনেমায় প্রথম দিনের শুটিংয়ের জন্য তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে’

স্মৃতিচারণা, আলোচনা, সংগীত ও চলচ্চিত্রের নির্বাচিত দৃশ্যের প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটক ও তাঁর যমজ বোন প্রতীতি দত্তকে জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো।

রোববার বিকেলে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনের রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি। অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩৯তম জন্মতিথি উপলক্ষে তাঁর প্রতিও বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’গানটি দিয়ে। এরপর স্মৃতিচারণা করেন ঋত্বিক কুমার ঘটকের বিখ্যাত চলচ্চিত্র তিতাস একটি নদীর নাম–এর প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ধ্রুপদি চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই। ১৯৬২ সালে সুবর্ণ–রেখা চলচ্চিত্রটি নির্মাণের দশ বছর পর তিতাসের কাজ শুরু করেছিলেন ঋত্বিক কুমার। প্রায় এক বছর ধরে কাজ হয়েছে। এই এক বছর তিনি ঋত্বিক কুমারের সঙ্গে কাটিয়েছেন। সবারই জানা কিছুটা খ্যাপাটে স্বভাবের ছিলেন ঋত্বিক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে বাদপ্রতিবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, লক্ষ্য ছিল, যা কিছু হোক ঋত্বিক কুমারকে দিয়ে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শেষ করানো। এসব করতে গিয়ে গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল এই অনন্য প্রতিভাবান মানুষটির প্রতি। নির্মাণ শেষে ঋত্বিক বলেছিলেন, এই চলচ্চিত্রটি তিনি নির্মাণ করেছেন সময়ের চেয়ে ২০ বছর এগিয়ে।

তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র আবুল হায়াতই জীবিত আছেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটি তাঁর জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র। ঋত্বিক কুমারের মতো নির্মাতার হাত ধরে এত বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারা তাঁর অভিনয়জীবনের একটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সিনেমায় প্রথম দিনের শুটিংয়ের জন্য টানা তিন দিন তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তখন ঢাকা ওয়াসাতে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। শুটিং হচ্ছিল মানিকগঞ্জে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে যেতেন আর সারা দিন অপেক্ষা করার পর পরিচালক তাঁকে পরের দিন আসতে বলতেন। অবশেষে তৃতীয় দিন রোজী সামাদের সঙ্গে তাঁর শুটিং হয়। তিনি বলেন, বাইরে থেকে ঋত্বিক কুমারকে দেখে যেমন মনে হতো, ভেতরের মানুষটি ছিল তার বিপরীত। খুব ঠান্ডা, নরম হৃদয়ের ছিলেন তিনি।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সবাই জানেন ঋত্বিক কুমার নিজের জীবনের প্রতি যত্নবান ছিলেন না। মাত্র পঞ্চাশ বছরের জীবন। আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন তিনি। বৈচিত্র্যময় প্রতিভাবান ছিলেন। নাটকে অভিনয় করেছেন। মৌলিক নাটক রচনা করেছেন পাঁচটি। গল্প লিখেছেন। তবে চলচ্চিত্রের জন্যই তিনি খ্যাত হয়েছেন। দেশভাগ তাঁর হৃদয়কে বিক্ষত করেছিল। দেশভাগ, সামাজিক অবক্ষয়, নারীর অবস্থান—এসব বারবার এসেছে তাঁর নাটক, গল্প ও চলচ্চিত্রে।

প্রাবন্ধিক মফিদুল হক তাঁর আলোচনার শুরুতে ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদান তুলে ধরেন। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদে প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। নতুন প্রজন্মকে তাঁর অবদান স্মরণ করতে হবে।

ঋত্বিক কুমার সম্পর্কে মফিদুল হক বলেন, ঋত্বিক কুমারের কথা বলতে সাধারণত উষ্কখুষ্ক চুল, মলিন বেশভূষার একটি মানুষের কথাই মনে আসে। তবে এটি তাঁর প্রকৃত চেহারা নয়। তাঁর বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর বড় ভাই বিখ্যাত সাহিত্যিক মণীশ ঘটক। মণীশের কন্যা মহাশ্বেতা দেবী। শৈশবে ঋত্বিক ও তাঁর যমজ বোন প্রতীতি কলকাতায় স্কুলে পড়েছেন। গাড়িতে করে যাতায়াত করেছেন। তবে তিনি জন্মস্থান রাজশাহীতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছিলেন। এখানেই তাঁর নাটকে অভিনয় ও সাহিত্যচর্চার শুরু। দেশভাগ ঋত্বিককে বদলে দিয়েছিল। জন্মস্থান ছেড়ে বাবার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। যমজ বোন প্রতীতির বিয়ে হয় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পুত্রের সঙ্গে। দেশভাগের বেদনা ঋত্বিক তাঁর কাজে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। রাজশাহীতে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি তাগিদ দেন।

আলোচনায় আরও অংশ নেন নারী নেত্রী সুলতানা কামাল, নির্মাতা শামীম আকতার, পারিবারিক বন্ধু মাহেরা খাতুন, কিশওয়ার কামাল, প্রতীতি দত্তের মেয়ে আরমা দত্ত।

অনুষ্ঠানে ঋত্বিক কুমারের বিভিন্ন চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্য বড় পর্দায় প্রদর্শন করে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল। সংগীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা। সঞ্চালনা করেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সিনেমায় প্রথম দিনের শুটিংয়ের জন্য তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে’