পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের সম্মেলন প্রায় দুই যুগ পর রবিবার (২০ এপ্রিল) উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে রাকিবুল ইসলাম রাকিব সভাপতি ও ইমরুল কায়েস কাব্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে।

ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনা শেষে রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৬টায় ফলাফল ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

কমিটিতে অন্যান্য পদের মধ্যে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে শরিফুল ইসলাম, সহ-সভাপতি পদে সানোয়ার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান শ্রাবণ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বায়েজিদ ইসলাম রিমন নির্বাচিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

শেরপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সেবায় ছাত্রদল

মহেশখালীতে ছাত্রলীগ নেতার লাঠির আঘাতে বিএনপি নেতা নিহত

এর আগে কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ৫টি বুথে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইন ধরে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলন উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল। পাবনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান প্রিন্স।

সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী জানান, সম্মেলনকে সামনে রেখে ২ হাজার ২০০টি ফরম বিতরণ করা হয়। তার মধ্যে থেকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২ হাজার ২ জনকে। আর সম্মেলনে সভাপতি পদে চারজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘‘গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাই গণতান্ত্রিক ধারা আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে আরো বেশি উন্নত করবে। সাম্য মানবিক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণ নেতৃত্ব শিক্ষার্থীরা কাজ করবে। পরবর্তী স্তরে এই নেতৃত্ব তাদের বিকশিত করবে।’’ 

নবনির্বাচিত সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাস রাকিব বলেন, ‘‘আমি চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এই ক্যাম্পাসকে আরো বেশি সুন্দর, সুশৃঙ্খল, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত করার চেষ্টা করবো। শিক্ষার্থীবান্ধব নিরাপদ ক্যাম্পাস কীভাবে করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করবো। শিক্ষার্থীরা আজ আমাকে যে দায়িত্ব দিলেন তা আমি সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করবো।’’ 

সর্বশেষ ২০০২ সালে সরকারি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ক ন দ র য় ছ ত রদল র স ত হয় ছ ল ইসল সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ