নয়ন আজ নতুন একটা চাকরিতে যোগ দিয়েছে। এটি তার চতুর্থ চাকরি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর এর আগের তিনটি চাকরির কোনোটিতেই ছয় মাসের বেশি টেকেনি সে। মেধাবী ছাত্র ছিল সে। পরিশ্রমীও। শুধু জায়গা-অজায়গায় মাত্রাতিরিক্ত তেলবাজির জন্য তার চাকরিগুলো টেকে না। তেল মারা তার একটা নেশা। অফিস ও বাসার দারোয়ান, পিয়ন, সহকর্মী সবাইকে তেল মারে। এমনকি বেশি তেল মারতে গিয়ে তার প্রেমিকারাও ‘আঁতেল’ বলে ছেড়ে চলে যায়! এমডি স্যারের রুমের সামনে গিয়ে দরজার নব ঘুরিয়ে নয়ন বিনয়ের সঙ্গে বলল, আসতে পারি স্যার?
– আরে, নয়ন সাহেব। তা নয়ন সাহেব, নতুন অফিস কেমন লাগছে?
– চমৎকার লাগছে স্যার। এ অফিসের সবাই এত ভালো, এত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যে আমি মুগ্ধ। এমন অফিসে চাকরি করা আমার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল। আজ স্বপ্নপূরণ হলো। অসাধারণ অনুভূতি!
– হুম, বুঝলাম নয়ন সাহেব। আমাদের অফিসটা আসলেই অনেক ভালো। সবাই অনেক কো-অপারেটিভ। আপনার কোনো সমস্যা হবে না। যে কোনো সমস্যা হলে আপনি আমাকে ইনফর্ম করবেন। কোনো দ্বিধা করবেন না।
– সত্যি স্যার, আপনাকে দেখে বুঝেছি বস কাকে বলে, কেমন হওয়া উচিত। এমন ব্যক্তিত্বের অধীনে চাকরি করতে পারাটা চরম ও পরম সৌভাগ্যের। আপনি আসলেই বড়মনের গুণী একজন মানুষ।
– নয়ন সাহেব, আজই তো জয়েন করলেন। একসঙ্গে এত প্রশংসা করলে কীভাবে হয়! আমাকে তো আপনি এখনও ভালো করে চিনলেনই না।
– স্যার, এই যে কথায় আছে ‘একটা ভাতে চাপ দিলে পুরো হাঁড়ির খবরই বলা যায়’, আপনার ব্যাপারটাও তাই। আপনি আসলেই আদর্শ বস।
– ঠিক আছে নয়ন সাহেব। এবার আপনি আসুন। এনজয় ইউর জব।
নতুন অফিসের চাকরিটাও আড়াই মাসের বেশি টিকল না। কিছুদিন পর নয়ন জুটিয়ে নেয় নতুন চাকরি। তার স্বভাব বদলায় না কখনোই। ফলে তার তৈলাক্ত জীবনটা শুধু চরকার মতো ঘুরতে থাকে, ঘুরতেই থাকে.
সুহৃদ মৌলভীবাজার
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ নয়ন স হ ব
এছাড়াও পড়ুন:
সেই রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যা ঘটেছিল
২৩ আগস্ট রাতে আমাদের গ্রেপ্তার
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, এই লেখক শেখ আবদুল আজিজ ও আবদুস সামাদ আজাদ—এই ৬ জনকে ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট একসঙ্গে গ্রেপ্তার করে আমাদের পল্টনে কন্ট্রোল রুমে একটি ভাঙা বাড়িতে নেওয়া হয়। আমরা বসা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সৈয়দ আহমদকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জনৈক কর্নেল ফারুককে অনুরোধ করেছিলেন।
কর্নেল ফারুক উত্তরে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সবার ট্রায়াল এখানে হবে।’ আমাদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছিল, ‘ইউ উইল হ্যাভ টু জাস্টিফাই ইয়োর করাপশন।’ এ কথা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, এটা কোর্ট নয়, আদালত নয়, কীভাবে এখানে বিচার হবে? এই পরিস্থিতিতে আমাদের পরস্পরের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যে মেজর ডালিম এসে এইচ এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগল। কামরুজ্জামান ডালিমকে বলেছিল, ‘এ রকম তো কথা ছিল না!’ তারপর ডালিম চলে গেল। আমাদের সামনে আমাদের সহানুভূতিশীল পুলিশ কর্মচারীরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। কিছু সময় পর তারা এসে বলল, ‘আপনারা এই গাড়ি ও মাইক্রোবাসে তাড়াতাড়ি ওঠেন; সেন্ট্রাল জেলে যেতে হবে।’ আমরা গাড়িতে উঠলাম এবং ভাবলাম, বেঁচে গেলাম। সেন্ট্রাল জেলে প্রবেশ করলাম। আমাদের নতুন জেলে থাকার জায়গা করে দেওয়া হলো।