বাংলাদেশকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ দেখছে জিম্বাবুয়ে
Published: 22nd, April 2025 GMT
সাত বছর আগে এই সিলেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। সেটা ছিল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট। চা-বাগানের সবুজে ঘেরা সেই মাঠে আবার খেলতে নেমে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রথম ইনিংসে তারা ৮২ রানের লিড পেয়েছে। দ্বিতীয় দিন শেষে সেই লিড ২৫ রানে নেমে এসেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৫৭ রানে দিন শেষ করেছে। এর পরও জয়ের দারুণ সুযোগ দেখছেন হাফ সেঞ্চুরি করা জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান বেনেট।
গতকাল সোমবার দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে এসে জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন বেনেট। বিশেষ করে, শেষ বিকেলে ওপেনার সাদমান ইসলামের উইকেট তুলে নিতে পারায় তারা কিছুটা এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন তিনি, ‘গতকাল (রোববার) বাংলাদেশকে ১৯১ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর শেষ দিকের পারফরম্যান্সে আমার মনে হচ্ছে, ম্যাচটি এখন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছে। তবে আমার মতে, আজ বিকেলের দিকে উইকেটটি নিয়ে আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি। কালকের (আজ) দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কাল সকালে তাদের ওপর চড়াও হতে হবে। আশা করছি, চতুর্থ ইনিংসে আমাদের সামনে তারা বড় লিড দিতে পারবে না।’
তারা শুধুই কিছুটা এগিয়ে আছে না, ম্যাচটি জয়ের সুবর্ণ সুযোগ তাদের রয়েছে বলেও মনে করছেন বেনেট, ‘আমি মনে করি, ম্যাচটি জেতার দারুণ সুযোগ আছে আমাদের সামনে। এখনও আমরা ২০-৩০ রানে (আসলে ২৫) এগিয়ে আছি। আজ রাতে আমাদের বোলাররা বিশ্রাম পাবে। কাল সকালে তারা আরও উদ্যম নিয়ে নামবে। কী ঘটবে, সেটা কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। টেস্টের এখনও অনেক সময় বাকি। আগামীকাল আমরা নিজেদের সেরাটা দেব।’
গতকাল বিকেলে বোলারদের সৃষ্টি করা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের আরও কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারতেন তারা। সেজন্য কিছুটা আক্ষেপও করলেন ২১ বছর বয়সী এ ওপেনার, ‘বিকেলে আমরা দুটি ক্যাচ ফেলেছি। ক্যাচ তো কেউই ফেলতে চায় না। তার পরও হয়ে যায়। তবে এই সুযোগ নষ্টের জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করা চলবে না, বরং পাশে দাঁড়াতে হবে।’
৬৪ বলে ৫৭ রান করে নাহিদ রানার লাফিয়ে ওঠা একটি বলে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। বাংলাদেশি এ পেসারের বেশ প্রশংসা করেছেন তিনি, ‘তাঁর বলে বেশ ভালো পেস রয়েছে। আমার অবশ্য ফাস্ট বল খেলতে সমস্যা হয় না। দ্রুত এলে বরং আমার মারতে সুবিধা হয়। আসলে বিষয়টা নির্ভর করে আমি বল কতটা ভালো দেখছি, তার ওপর। আমার মনে হয়, আজ আমি ওই শটটি খেলতে ভুল করেছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা