ঢালিউডের সুপারস্টার শাকিব খান দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে রোমান্টিক, পারিবারিক ও ফর্মুলাভিত্তিক বাণিজ্যিক সিনেমায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে দর্শকের মেজাজ, বদলেছে বিনোদনের ধরন। সেই পরিবর্তন সাদরে গ্রহণ করেই শাকিব খান এখন ঝুঁকেছেন অ্যাকশনধর্মী সিনেমার দিকে।

গত বছর ভার্সেটাইল মিডিয়ার প্রযোজনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে ‘নতুন’ শাকিবের যাত্রা শুরু। এরপর ‘তুফান’-এ পুরোপুরি ভিন্ন রূপে হাজির হন তিনি। ডার্ক লুক, ইনটেন্স সংলাপ ও বাস্তবসম্মত অ্যাকশন দৃশ্যের মাধ্যমে শাকিব খান যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে যান। এটি ছিল শাকিবের চেনা বলয়ের বাইরে এক সাহসী পদক্ষেপ।

এই ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘বরবাদ’ সিনেমা সেই রূপান্তরকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের লোকেশন, ভারতের অভিজ্ঞ টেকনিক্যাল টিম, চমৎকার কোরিওগ্রাফি এবং বিশাল বাজেট— সব মিলিয়ে ‘বরবাদ’ হয়ে উঠেছে ঢালিউডে অ্যাকশন ঘরানার এক নতুন মানদণ্ড।

পরিচালক মেহেদী হাসানের এটি প্রথম সিনেমা হলেও তার নির্মাণে ছিল পরিপক্বতার ছাপ। শোনা যায়, প্রায় ১৫ কোটি টাকা বাজেট, যার ৮০ শতাংশ শুটিং হয়েছে বিদেশে। এই সিনেমার ভিজ্যুয়াল ট্রিটমেন্ট এবং শাকিব খানের পারফরম্যান্স একে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
‘বরবাদ’ দিয়ে দর্শকের কাছ থেকে যে ইতিবাচক রেসপন্স এসেছে, তা প্রমাণ করে, শাকিবের অ্যাকশন দর্শক গ্রহণ করেছে। তাই দেরি না করে শুরু হয়েছে পরবর্তী সিনেমা ‘তাণ্ডব’-এর শুটিং। রাইজিংবিডিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাকিব খান বলেন, ‘‘বরবাদ সিনেমার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। সিনেমাটি মুক্তির পরই ‘তাণ্ডব’-এর শুটিং শুরু করি। এর বাজেটও অনেক বেড়ে গেছে।”

এই সিনেমার শুটিং সেটেও দেয়া গিয়েছে বড় বাজেট ও শক্তিশালী অ্যাকশন দৃশ্যে। অ্যাকশন হিরো হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শাকিব পেছনে ফিরে তাকাচ্ছেন না। দর্শকও লুফে নিয়েছে তাকে। যদিও শাকিব খানের অ্যাকশন ঘরানায় ছবি নির্মাণ নতুন নয়। এর আগে ‘শিকারি’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘ক্যাপ্টেন খান’, ‘নবাব’–এর মতো সিনেমায় অ্যাকশন দৃশ্যে তাকে দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিনেমাগুলো ছিল স্টাইলাইজড, থিমেটিক অ্যাকশন—যা অনেকটা দক্ষিণ ভারতীয় ফর্মুলার কপি বলে সমালোচিত হয়েছে।

এর মধ্যে যেমন ‘শিকারি’ বা ‘নবাব’ ভালো ব্যবসা করেছে, তেমনি ‘পাসওয়ার্ড’ বা ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছিল ব্যবসায়িকভাবে গড়পড়তা বা ব্যর্থ। এসব অভিজ্ঞতা হয়তো শাকিব খানকে বুঝিয়ে দিয়েছে কেবল ধামাকা অ্যাকশন দিয়ে নয়, কন্টেন্ট ও নির্মাণশৈলী দিয়েই দর্শক জয় করা যায়।

'তুফান', 'বরবাদ', 'তাণ্ডব'—টানা তিনটি অ্যাকশন সিনেমার মাধ্যমে ধাপে ধাপে উঠে আসছে এক নতুন শাকিব খান। বিশেষ করে 'বরবাদ'–এর মাধ্যমে সেই অ্যাকশন হয়ে উঠেছে বেশি বাস্তবসম্মত, চরিত্রনির্ভর এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। শারীরিক প্রস্তুতি থেকে শুরু করে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী অ্যাকশন দৃশ্যের পরিপূর্ণতা—সব কিছুতেই এখন যুক্ত হয়েছে পেশাদারিত্ব।

এ ধরনের রূপান্তর একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর জন্য সহজ সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু শাকিব খান সেই সাহস দেখিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু 'তারকা' নন, তিনি সময়চেতা শিল্পী, যিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে জানেন।

আজকের সিনেমা জগতে অ্যাকশনই সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরানা। হলিউড, বলিউড, তামিল, তেলেগু কিংবা কোরিয়ান সিনেমা—সব জায়গাতেই অ্যাকশনই মূল বিনোদনের হাতিয়ার। বাংলাদেশি দর্শকরাও এখন চাইছে বাস্তবসম্মত গল্প, আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ আর আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণ। সেই জায়গাটিকেই ধরেই এগোচ্ছেন শাকিব খান। এবং এই যাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের জন্য নয়, বরং গোটা ইন্ডাস্ট্রির জন্যই একটি বড় সম্ভাবনার বার্তা।

শাকিব খানের অ্যাকশন অধ্যায় কেবল একটি ঘরানা পরিবর্তনের গল্প নয়, বরং এটি বাংলা সিনেমায় নতুন দিগন্তের সূচনা। সময় বলবে এই যাত্রা কতদূর এগোয়, তবে এখন পর্যন্ত যেভাবে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন—তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক এবং ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য কশন দ শ য র জন য বরব দ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সোমবার সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে, ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ