কেন্দ্রীয় দুই নেতার জেলা কমিটিতে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক
Published: 22nd, April 2025 GMT
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আসন্ন কাউন্সিল ঘিরে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কারণ, কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি দলীয় গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন জেলার নেতাকর্মীরা।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ প্রস্তাব করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাউন্সিলে ভার্চুয়ালি উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করার পরই চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হবে। আসন্ন কাউন্সিলে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। গত সোমবার সভাপতি পদে দলের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মাহাবুবুল হক নান্নুর নাম ঘোষণায় দলের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়েছে।
বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৫ (খ) ধারায় উল্লেখ আছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোনো কর্মকর্তা এবং দলীয় অঙ্গদল বা সংগঠনের কোনো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক অন্য কোনো পর্যায়ের কমিটিতে কর্মকর্তা নির্বাচিত হতে পারবেন না।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় পদে থেকে আসন্ন কাউন্সিলে দুই নেতার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে সভাপতি প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর বলেন, ‘বিষয়টি রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে। এটা তারা কীভাবে কী মনে করে ঘোষণা করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদে থেকে বরিশাল বিভাগীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন মাহাবুবুল হক নান্নু। তিনি আবার কীভাবে কাউন্সিলের সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।’
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের ভাষ্য, সহসাংগঠনিক সম্পাদককে ৫ আগস্টের আগে দু-একটি ছাড়া দলীয় কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি। তাঁকে দাওয়াত দিলে বলতেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, আসা যাবে না। আবার একই সময়ে এলাকার বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা যেত তাঁকে। এখন তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন বলে দাবি করেন তিনি। কারণ দলীয় গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে পরিষ্কার উল্লেখ আছে। তাছাড়া তারা যাদের নিয়ে সভা করে এ ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের কাউন্সিলে ভোটাধিকার নেই। তারা বিগত দিনে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে থাকার ছবি দেখাতে পারবেন না। ৫ আগস্টের আগে কোথায় ছিলেন তারা?
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ‘আজ (২১ এপ্রিল) বিএনপির নেতাকর্মীকে নিয়ে সভার আয়োজন করি। এতে সর্বসম্মতিক্রমে জেলা কাউন্সিলে আমাকে সভাপতি এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নুকে সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা তো কাউন্সিলের ভোটার না। তাদের সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় পদে থেকে প্রার্থী হতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা কমিটিতে প্রার্থী হতে বাধা নেই। গঠনতন্ত্রে এ রকম কোনো বাধা আছে বলে মনে হয় না।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু জানান, বিগত পকেট কমিটি নিয়ে দ্বিমত আছে। অনেকেই বঞ্চিত। তাই সবার মতামতের ভিত্তিতে ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিল হবে। বিগত কমিটি একতরফা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে যারা বাদ পড়েছেন, তাদের নিয়েই কমিটি করতে কাজ করছেন ঝালকাঠির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিন ভাই।’ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং বিভাগীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য হয়ে আপনি জেলা কাউন্সিলের প্রার্থী হতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নান্নু বলেন, ‘একাধিক প্রার্থী, বহুত্ববাদ থাকবেই। এটাই গণতন্ত্র। দল কোনো ব্যক্তি ইচ্ছায় চলে না। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বিগত কমিটিতে কিছু ত্রুটি ছিল। তাই নিয়ে কিছু দ্বন্দ্ব মতবিরোধ সৃষ্টি হতেই পারে। এসব সমাধান করেই এগিয়ে যেতে হচ্ছে। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল ও মাহাবুবুল হক নান্নুর কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার কোনো সংবাদ জানা নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ম হ ব ব ল হক ন ন ন কম ট র সদস য গঠনতন ত র ব এনপ র স প রস ত ত ল ইসল ম কম ট ত ব ষয়ট হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কাদেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’
এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের
আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”
“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”
এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”
মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”
কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ