সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন মোদি
Published: 23rd, April 2025 GMT
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ বুধবার ভোরে দেশে ফিরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পরপর বিমানবন্দরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আজ মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সঙ্গেও মোদির একটি বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকে ওই হামলায় ভারতের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরক্ষাকৌশল নির্ধারিত হবে।
নরেন্দ্র মোদি গতকাল মঙ্গলবার পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা এবং যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মোদি বলেছেন, ‘আমি প্রার্থনা করছি, আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। ক্ষতিগ্রস্তদের সব রকম সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই জঘন্য কাজের পেছনে যারা রয়েছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। তাদের রেহাই দেওয়া হবে না। তাদের অশুভ পরিকল্পনা কখনো সফল হবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সংকল্প অটল ও আরও দৃঢ় হবে।’
মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ প্রধানমন্ত্রী মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মতো যুক্তরাষ্ট্র ও পেরু সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরছেন। অর্থমন্ত্রীর দপ্তর এক্সে এক পোস্টে বলেছে, এই কঠিন ও শোকাবহ সময়ে দেশের মানুষের পাশে থাকতে তিনি দ্রুত দেশে ফিরছেন।
হামলায় দুজন বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে একজন নেপাল ও একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক বলে জানা গেছে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বলেছেন, পেহেলগামে হামলায় নেপালের কোনো নাগরিক নিহত হয়েছেন কি না, যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। এক বার্তায় তিনি এ হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি গভীর শোক ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতা এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন।
পেহেলগামের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বৈসারানে গতকাল বন্দুকধারীরা পর্যটকদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। হামলার পর জম্মু অঞ্চলে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২২ এপ্রিল থেকে ১৭ জুনের মধ্যে ট্রাম্প–মোদির কোনো কথা হয়নি: জয়শঙ্কর
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, তিনিই ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধ থামিয়েছেন। বাণিজ্য চুক্তির কথা বলে দুই দেশকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ প্রসঙ্গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামের হামলার পর থেকে ১৭ জুনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো ফোনালাপ হয়নি।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের বদলায় ভারতের অপারেশন সিঁদুর অভিযান চার দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্রমাগত বলে চলেছেন, তিনিই যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশকে রাজি করিয়েছেন। দুই দেশকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করতে গেলে যুদ্ধ থামাতে হবে। এই মধ্যস্থতা নিয়ে ভারতে প্রশ্ন উঠেই চলেছে; কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্তত ২৪ বার এই দাবি করেছেন। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী একবারও বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট অসত্য বলছেন। ভারতের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাকিস্তানের কাছ থেকে এসেছিল। ভারত তা গ্রহণ করেছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় ভাষণ দেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামকাণ্ডের পর সহানুভূতি জানাতে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর পর তিনি ফোন করেন ১৭ জুন। কেন মোদির সঙ্গে কানাডায় তাঁর দেখা হচ্ছে না, তা ব্যাখ্যা করতে। এই দুই তারিখ, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ও ১৭ জুনের মধ্যে একবারও মোদি–ট্রাম্প ফোনালাপ হয়নি। জয়শঙ্কর আরও বলেন, যদ্ধবিরতির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার কোনো সম্পর্কও নেই।
জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে অপারেশন সিঁদুর এক ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ (নিউ নর্মাল) সৃষ্টি করেছে। এই নতুন স্বাভাবিকতার পাঁচটি দিক। এক, সন্ত্রাসবাদীদের আর ঢাল হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না। দুই, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী হামলার যোগ্য জবাব সব সময় দেওয়া হবে। চুপ করে বসে থাকার দিন শেষ। তিন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলবে না। সন্ত্রাসের আবহে আলোচনায় বসার উদ্দেশ্য একটাই, কী করে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা হবে। চার, পরমাণু অস্ত্রের ব্ল্যাকমেলের কাছে ভারত মাথা নোয়াবে না। পাঁচ, সন্ত্রাস ও সুপ্রতিবেশীমূলক মনোভাব পাশাপাশি চলবে না। রক্ত ও পানি একসঙ্গে বইতে পারে না। এ পাঁচ বিষয়ে ভারতের মনোভাব সুস্পষ্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতি সফল বলেই লস্কর–ই–তাইয়েবার ছায়া–সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে। পররাষ্ট্রনীতি সফল বলেই মাত্র তিনটি দেশ (চীন, তুরস্ক, আজারবাইজান) অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেছে। শত্রুতা ও বিরোধিতার লাল রেখা (রেড লাইন) অতিক্রম করার শাস্তি কী, তা বোঝানোই ছিল অপারেশন সিঁদুরের উদ্দেশ্য।