পারভেজের মা আহাজারি করেছেন– ‘পুতের মুহেত্তে একটাবার মা ডাক হুনবার চাই’। কিন্তু খুন হওয়া ছেলে তো আর মা ডাকার জন্য ফিরে আসবে না। গীতিকার মিল্টন খন্দকার লিখেছেন, ‘মা তুমি আমার আগে যেও না গো মরে’।

সেখানে ছেলের আহাজারি– ‘এই পৃথিবীর আলো আমায় যে দেখালো, তাকে মাটি দিবো কী করে’। আর এখানে মায়ের আকুতি একবারের জন্য ছেলের মুখ থেকে মা ডাক শোনার। মৃত্যু এমনই এক নির্মম বাস্তবতা, কোনো মায়ার বাঁধনেই তাকে বাঁধা যায় না। এটি এমনই এমন নিয়তি, কার আগে কে যাবে, তার ঠিক নেই। পারভেজ যেমন মায়ের আগেই চলে গেলেন।

জাহিদুল ইসলাম পারভেজ রাজধানীর প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, হাসাহাসির মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পারভেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রদল তাঁর হত্যার মদদদাতা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে অভিযুক্ত করেছে। অন্যদিকে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

তুচ্ছ বিষয় কীভাবে খুনের কারণ হয়, তা নিয়েই বরং আলোচনা। তরতাজা এক তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করছিলেন– তার কারণ জানতে গিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, এর পর ধাওয়া করে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা! কতটা ভয়ংকর! পারভেজের বন্ধু তরিকুলকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনায় পারভেজের ভাই বনানী থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যাচ্ছে, পারভেজ তাঁর বন্ধু টেক্সটাইল বিভাগের তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বনানীর প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে একটি দোকানে কথাবার্তা ও হাসাহাসি করছিলেন। তাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় আসামি মেহেরাজ, পিয়াস ও মাহাথি হাসাহাসির কারণ জানতে চান। এ নিয়ে তর্কাতর্কি হলে তিন শিক্ষক বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এর পর পারভেজকে পেয়ে আসামিরা ছুরিকাঘাত করেন। একইভাবে তরিকুলও আক্রান্ত হন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক পারভেজকে মৃত ঘোষণা করেন।  

এ হত্যাকাণ্ডে নারীসংশ্লিষ্টতার বিষয়ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট, সাধারণ বিষয় থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। আরও বিস্ময়কর, শিক্ষকরা প্রারম্ভিকভাবে শিক্ষার্থীদের মীমাংসার চেষ্টাও করেছিলেন। তার পরও আক্রমণকারীরা ক্ষান্ত হয়নি! তারা এতটা বেপরোয়া হলো কীভাবে? পুলিশ এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেহেরাজ ইসলামসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিচার নিশ্চয় দেখার অপেক্ষা।

ইতোপূর্বে আমরা কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হওয়ার ঘটনা দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যারা পড়াশোনা করেন, অন্তত তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘ম্যাচিউরিটি’ আসে। এমন সমবয়সী তরুণদের মধ্যে হাস্যরসের স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে এমন খুন অস্বাভাবিক। অবশ্য রাজনৈতিক বিবাদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে ইতোপূর্বে। দুই দলের মধ্যে কিংবা দলীয় কোন্দলে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা থেকে সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটেছে। এখন সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। এখানকার হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা; নিজেদের বীরত্ব জাহির করা কিংবা অস্বাভাবিক ক্রোধ। পারভেজের ক্ষেত্রে কোনটা হয়েছে, বলা মুশকিল। তবে কোনোটিই প্রত্যাশিত নয়।  

একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দিনদুপুরে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই হত্যাকাণ্ড ঘটল! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তো নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত। এখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতাও যে কমে যাচ্ছে– তা স্পষ্ট। টেকসই সমাজের জন্য সেই সহনশীলতা জরুরি। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে পড়াশোনা করেও যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা তৈরি না হয়, তবে তা হতাশাজনক। 

পারভেজ ছিলেন মা-বাবার একমাত্র ছেলে। সন্তানের শূন্যতা মাতা-পিতার চেয়ে আর কে বেশি অনুভব করেন? পারভেজ ফিরবেন না সত্য, কিন্তু এভাবে আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

[email protected]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কের হার কমায় একে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য।”

শুক্রবার (১ আগস্ট) এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শুল্ক হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে আরোপিত শুল্ক হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। এর মাধ্যমে আমাদের আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও সেটাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।

তিনি বলেন, আলোচকরা এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নিরলসভাবে কাজ করে জটিল আলোচনাকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। যেখানে শুল্ক, অশুল্ক ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত এই চুক্তি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা সংরক্ষণ করেছে। পাশাপাশি, বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তাবাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি ও আমাদের মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ

কোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, এ অর্জন কেবল বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না; বরং এটি বৃহত্তর সম্ভাবনা, ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল, উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আজকের সাফল্য আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা ও আগামী দিনের আরো শক্তিশালী অর্থনীতির সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।

 

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ