কোন বয়সে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন বেশি
Published: 24th, April 2025 GMT
মানব শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান। হাড়, মাংসপেশি, দাঁত, স্নায়ুতন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তবে বয়সভেদে ক্যালসিয়ামের চাহিদা ভিন্ন। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় দৈহিক বৃদ্ধি এবং হাড়ের গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের জোগান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন এবং স্তন প্রদানকারী মায়েদের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনও বেশি। ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীর ক্যালসিয়ামের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ সময় নারীর এস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায়। এ হরমোনটি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং হাড় গঠনে অংশ নেয়। এর অভাবে হাড় ক্ষয়ের ইঞ্জিন সক্রিয় হয়ে ওঠে। নারীর রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ হলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর ফলে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। সে কারণে এ বয়সে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন রয়েছে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ওষুধ হিসেবে সেবন করা। এ সময়গুলোয় প্রতিদিন ১৩০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
যেসব শিশু গুঁড়া দুধের ওপর নির্ভরশীল তাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেননা গুঁড়া দুধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম সহজে হজম হয় না। মায়ের বুকের দুধের ক্যালসিয়াম শিশুর শরীরে সহজে হজম হয়। যাদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ধূমপানের ফলে ক্যালসিয়াম শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত কফি, কোক ও চা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত অ্যালকোহল একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন-ডি ক্যালসিয়াম শোষণের একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন-ডির প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। সুতরাং যারা রোদ থেকে দূরে অবস্থান করে তাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। হাড় থেকে ক্যালসিয়াম চলে আসে রক্তে এবং কিডনির মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। সোডিয়াম তথা খাবার লবণ কিডনি পথে ক্যালসিয়াম বের করতে সাহায্য করে। সে জন্য লবণ গ্রহণ কমালে কিডনি ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে পারে। যেসব খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ রয়েছে, সেগুলো পরিহার করতে হবে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ক য লস য র আশঙ ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।