ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় কাশ্মীরের শুধু একজন নিহত হয়েছিলেন। তাঁর নাম সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। ভয়াবহ ওই হামলার সময় এক বন্দুকধারীর কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন আদিল। ৩০ বছর বয়সী এই তরুণ এক ‘পনিওয়ালা’ বা ঘোড়াচালক।

আদিলের বাবা হায়দার শাহ বলেছেন, তাঁর ছেলে পর্যটকদের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে নিয়ে তিনি গর্বিত।

আদিল হুসেন পেশায় ঘোড়াচালক। হামলার দিন তিনি যেসব পর্যটককে ঘোড়ায় বৈসারানের তৃণভূমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিহত হন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গত বুধবার তাঁর জানাজায় অংশ নেন এবং শত শত শোকাহত মানুষের সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন।

এরপরই নিহত আদিল হুসেনের বীরত্বপূর্ণ কাজটি জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাঁকে পেহেলগামের হাপাতনার্ড গ্রামে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী নিহত আদিল হুসেনের বাবা হায়দার শাহকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি শোকাহত ও নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে পর্যটক হত্যা: পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিবাদ, মিছিল২ ঘণ্টা আগে

গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে হায়দার শাহ বলেন, ‘আমি তাঁর জন্য ও তাঁর আত্মত্যাগের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। আমি এখনো বেঁচে আছি, কারণ, আমি গর্ববোধ করছি। তা না হলে, ওর মরদেহ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি মরে যেতাম। ওর সাহসিকতার জন্য আমি খুশি। কিছু মানুষ ওর জন্য বেঁচে গেছে, এটা ভেবে আমি গর্বিত।’

নিহত আদিলের ভাই সৈয়দ নওশাদ বলেন, ‘আদিল হুসেন কাজ করতে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। সেখানে এক বন্দুকধারী তাঁর বুকে তিনবার গুলি করে। তিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে বৈসারানে নিয়ে যেতেন। মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা যখন পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়, তখন আমার ভাই ওদের থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যটক, যাঁর বাবা ওই হামলায় নিহত হন, তিনি এসএমএইচএস হাসপাতালে আমাকে আদিলের বীরত্বের কথা জানান।’

আরও পড়ুনকাশ্মীরে পর্যটকদের গুলি করার আগে কী হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা৩ ঘণ্টা আগে

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আদিলের সাহসিকতার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘তিনি যে পর্যটকদের ঘোড়ায় করে পার্কিং এলাকা থেকে বৈসারান ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের রক্ষা করতে তিনি নিজের প্রাণ দিয়েছেন। তাঁর শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাঁদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি।’

ওমর আবদুল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘আদিল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর অসাধারণ সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা তাঁদের পাশে আছি এবং যতটা সম্ভব সহায়তা করব।’

আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলা: ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 
  • কক্সবাজারে পর্যটকদের নতুন ঠিকানা সাম্পান রিসোর্ট