ধর্মীয় মূল্যবোধ ও পারিবারিক অক্ষুণ্নতায় সংকট তৈরি করতে পারে
Published: 25th, April 2025 GMT
সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে সমকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়ার সঙ্গে কথা বলেছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।
সমকাল: নারী সংস্কার কমিশন গঠন কতটা প্রতিনিধিত্বমূলক?
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বিষয়ে কয়েকটি বিষয় চোখে পড়েছে, যেমন চল্লিশোর্ধ্ব নারীর আধিক্য। ২০-৩০ বছর আগের নারী অধিকার আন্দোলন আর আজকের নারী অধিকার আন্দোলনের পার্থক্য অনেক। তরুণ প্রজন্মের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আগের প্রজন্ম থেকে অনেক আলাদা। কমিশনে তরুণ প্রজন্মের আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব জরুরি ছিল। সদস্যদের মাঝে পেশাগত বৈচিত্র্য ছিল না। প্রায় সবাই উন্নয়ন খাতের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কোনো সদস্য নেই। আজকের দিনে নারী উন্নয়নে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই। কমিশনে ধর্মীয় বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। যেহেতু কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে জড়িত, এতে আলেম/ধর্মীয় বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি ছিল। এ ছাড়া ধর্মের দিক থেকে দেখলেও ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্যান্য প্রধান ধর্মের প্রতিনিধিত্বও এখানে নেই।
সমকাল: উত্তরাধিকার হিসেবে নারী-পুরুষের সমান সম্পত্তি বণ্টনের প্রস্তাব কেমন দেখছেন?
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: প্রস্তাবনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন উত্তরাধিকার হিসেবে নারী-পুরুষের সমান সম্পত্তি বণ্টনের সুপারিশ করেছে। পাশ্চাত্যে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যে মৃত ব্যক্তির সম্পদের সিংহভাগ পান তাঁর স্ত্রী; সামান্য অংশ পান সন্তানেরা। পিতা-মাতা কোনো অংশই পান না। ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তির সম্পদে তাঁর পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান সবার অংশ রয়েছে, যা কোরআনের সরাসরি টেক্সট দিয়ে নির্ধারিত। ইসলামে উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার সম্পদে বোনরা ভাইদের অর্ধেক পায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অর্ধেকই কি দেশে আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? বাস্তবতা হলো, আমাদের নারীরা পিতা বা স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। ভাইয়েরা বোনের প্রাপ্য সম্পত্তি দিচ্ছে না, তেমনি মৃত স্বামীর সম্পত্তির অংশ থেকে বিধবা স্ত্রীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান প্রচেষ্টা হবে ধর্মীয় বিধানে হস্তক্ষেপ নয়। বরং নারীরা যেন তাদের প্রাপ্য সম্পদ পান, তা নিশ্চিত করা।
সমকাল: অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব কেমন?
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অভিন্ন পারিবারিক আইনের সুপারিশ করেছে। আমাদের সমাজ ধর্মভিত্তিক ও পরিবারকেন্দ্রিক। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, আদিবাসী সবাই পারিবারিক জীবন নিজ নিজ ধর্মমতে পরিচালনা করে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই আমাদের দেশে পরিবারিক বন্ধন দৃঢ়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীসের ভিত্তিতে অভিন্ন পারিবারিক আইন করা হবে? মুসলিম আইন? হিন্দু আইন? নাকি পশ্চিমা আইন? তবে ধর্মকে বাদ দিয়ে পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা হলে পারিবারিক মূল্যবোধ ও অক্ষুণ্নতায় সংকট দেখা দেবে। ধর্মের নামে পরিবারের কোনো সদস্যের ওপর অন্যায় করা হলে সেই বিষয় অ্যাড্রেস করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
সমকাল: যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে আপনার মত কী?
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: আমাদের দেশে কতজন ইচ্ছাকৃত যৌনকর্মী হন? মাঠ পর্যায়ে কাজ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ যৌনকর্মীর পরিবার দরিদ্র এবং স্বল্প/অশিক্ষিত। তাদের প্রায় সবাই চাকরি, প্রেম/বিয়ের ফাঁদে পড়ে এ কাজে নেমেছেন অথবা জোর করে ধরে এনে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এদের প্রায় সবাই এ পেশা থেকে ফিরে আসতে চান। প্রত্যেক যৌনকর্মীর পেছনে রয়েছে অন্যায়-অবিচারের লম্বা কাহিনি। শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে যৌনকর্মীদের এই অন্যায় সাপ্লাই চেইনকে বৈধতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ইসলাম কিংবা অন্যান্য ধর্ম এই বিষয়কে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
বিদ্যমান যৌনকর্মীদের স্বীকৃতির চাইতে পুনর্বাসন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক লাখের কিছু বেশি যৌনকর্মী রয়েছেন, যা প্রতি ১০ হাজারে একজনেরও কম। প্রতিবেশী দেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রতি ১০ হাজারে পাঁচজন। আমাদের দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। আমরা সরকারিভাবে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি। এক লাখের মতো যৌনকর্মীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা চাইলে করতে পারব। তবে কঠোর হাতে যৌনকর্মী তৈরির সাপ্লাই চেইন বন্ধ করতে হবে। সমাজে আমরা এই মানবেতর পেশা আর দেখতে চাই না।
সমকাল: ১০ বছরের অধিককাল ব্যাপ্ত সংসার স্বামী কর্তৃক বিয়ে বিচ্ছেদের মাধ্যমে সমাপ্ত হলে স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করতে আইন সংশোধন প্রস্তাবের সঙ্গে মোহরানার সম্পর্ক আছে?
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: এখানে প্রথম বিষয় হলো, স্ত্রী তাঁর প্রাপ্য মোহরানা পাবেন। এটি বিচ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বিয়ে বিচ্ছেদের পর নারীদের অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। সরকার এ ক্ষেত্রে ইরানের মতো ভাবতে পারে। ইরানে বিচ্ছেদের পর একজন স্ত্রী বিয়ের সময়ে করা কাজের জন্য সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যৌতুক, বিরাট অঙ্কের মোহরানা, বিয়ে বিচ্ছেদের পর বিশাল আর্থিক ক্ষতিপূরণের কারণে সমাজে বিয়ে করা কঠিন হয়ে যায়। উন্নত বিশ্বে এ কারণে ছেলেরা প্রায়ই বিয়ে করতে চায় না এবং বিয়ের বাইরে সম্পর্ক রাখতে উৎসাহিত হয়। এতে পারিবারিক ব্যবস্থা বিনষ্ট হয় এবং নারীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। সমাজে বিয়েকে সহজ করতে হবে। এটাও বলা দরকার, নারীরা আজকাল রোজগার করছেন। বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলে নারীর পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রশ্ন আসতে পারে। তবে ইসলাম নারীর রোজগারকে একান্তভাবে তাঁর নিজের করে দিয়েছে।
সমকাল: বৈবাহিক ধর্ষণ বিষয়ে আপনার মত–
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়েও কথা উঠছে। আমার প্রশ্ন, এখন পর্যন্ত কয়জন নারী বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন? আমি মনে করি, অযথা একটি নন-ইস্যুকে ইস্যু বানানো হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে কোনো সংকট তৈরি হলে পারিবারিকভাবে সালিশ বা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেই এসবের সমাধান করা সম্ভব। সমাধানের সম্ভাবনা না থাকলে তালাকের সুযোগ আছে।
সমকাল: সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ সম্পর্কে আপনার মত–
সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া: কমিশন সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। আমি মনে করি, নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করেই আসা উচিত। এখানে কিছু আসন সংরক্ষিত থাকতে পারে। তবে একেবারে অর্ধেক সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রেখে বাকি অর্ধেক আসনেও নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ রেখে দিলে নারীদের আসন সংখ্যা ৫০-এর বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, যা ন্যায়সংগত নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র ব র ক আইন প রস ত ব য নকর ম অন য য় পর ব র আম দ র ন র মত চ ত কর সমক ল সদস য ইসল ম ব ষয়ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে আবার ইরানের হামলা, নাগরিকদের নেওয়া হলো সুরক্ষিত এলাকায়
ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের এক মুখপাত্রের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ হামলা ভোর পর্যন্ত চলবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ও আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের প্রতিবেদনেও নতুন করে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। খবর-গার্ড়িয়ান
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি শহর তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত করেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, এই দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান: ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব। নাগরিকরা এখন দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যেতে পারে।
এর আগে রোববার সোমবার ভোরে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় চারজন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে।
ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা সোমবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ, যাদের সকলের বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।
নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে: ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় শুক্রবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।
তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলি শহর পেতাহ টিকভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সেখানে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে গেছে। জানালা উড়ে গেছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর হাইফায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনুসন্ধান চলছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
নতি স্বীকারের কোনোও ইচ্ছা নেই: ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটি ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের কাছে নতি স্বীকার করার কোনোও ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ শুক্রবার তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা জোর দিয়েছে।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরে সেটি পুনরায় সম্প্রচারে আসে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অধীনস্থ ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলের হামলার পর আগুনে পুড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি নিশ্চিত নন—এই হামলায় তার কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কী, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।
টেলিভিশনটির একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তারা ভবনটিতে কাজ করছিলেন। তখন সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। কিন্তু আকস্মিক হামলার পর কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর অবশ্য পুনরায় সম্প্রচার কাজ চালু করতে সক্ষম হন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।
একপর্যায়ে টেলিভিশনটির সম্প্রচার শাখার প্রধান পেমান জেবেলি রক্তমাখা একটি কাগজ নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন’।
গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হামলার আগ মুহূর্তে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পর্দায় উপস্থাপিকাকে দেখা যাচ্ছিল। হামলার সময় উপস্থাপিকাকে দ্রুত সরে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গণমাধ্যম কার্যালয়টি ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।
এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পরে ওই হামলাটি চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে আঘাত করা হবে।