ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। শুক্রবার মস্কোয় তিন ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুজনের মধ্যে আলোচনা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে শুক্রবারই মস্কো সফরে যান স্টিভ উইটকফ। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প যে তৎপরতা চালাচ্ছেন, তার অংশ হিসেবে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো রাশিয়া সফর করলেন উইটকফ। শান্তি আলোচনায় যে অগ্রগতি হচ্ছে, সে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টও।

ইউরি উশাকভ বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুধু ইউক্রেন নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও কাছাকাছি এসেছে। ইউক্রেন সংকটের কথা বলতে গেলে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।

পুতিন ও উইটকফের বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ওয়াশিংটন। তবে বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এই আলাপচারিতার সময় এখন তাঁরা পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আর আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আমি মনে করি, সবশেষে আমরা বেশ কিছু ভালো চুক্তি করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে শুল্ক চুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তিও রয়েছে।’

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও। বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো আরও পরিমার্জন করা প্রয়োজন। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

এদিকে কিয়েভে রাশিয়ার হামলার পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনে ফিরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। একটি পূর্ণ ও শর্তহীন চুক্তি করতে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের ওপর যথেষ্ট চাপ দিচ্ছেন কি না—সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে মস্কোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার যে হুঁশিয়ারি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, সেদিকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর শক্তিশালী চাপ বা দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, এমন কিছু দেখছি না আমি।’

আরও পড়ুনপুতিনকে ‘থামতে’ বললেন ট্রাম্প২৪ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজেলেনস্কিকে ট্রাম্পের দোষারোপের পরপরই কিয়েভে রাশিয়ার হামলা, নিহত ৯২৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ