আবু হোরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় একটি হাদিস আছে, যাতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘর গুলিকে কবরস্থান বানিয়ো না। আমার কবরকে বানিয়ো না উৎসব-স্থান। আমার ওপর দরুদ পড়ো। তোমরা যেখানেই থাকো, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২)
দরুদ পাঠের এই নির্দেশের পর পর সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞেস করেছেন, কীভাবে তারা দরুদ পড়বেন। আল্লাহর রাসুল (সা.
আবদুর রহমান ইবনে আবু লাইলা (রা.) বলেন, একবার আমার সঙ্গে কা’ব ইবনে উজরার (রা.) সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি উপহার দেব না, যা রাসুল (সা.) থেকে আমি পেয়েছি?’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই দিন।’ তিনি বললেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আল্লাহর রাসুল, আপনার, আপনার পরিবারবর্গের প্রতি দরুদ কীভাবে পড়ব? আল্লাহ তো শুধু আমাদের সালাম পাঠানোর ধরন শিখিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইব্রা-হীম, ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্, কামা বারাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রা-হীম, ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। (অর্থ: ‘আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিমের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান। আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ(সা.) এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান।) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৩৮০)
আরও পড়ুনকেন দরুদ পাঠ করব১৫ মার্চ ২০২৫আবু হামিদ সায়িদি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, লোকেরা বলল, আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনার প্রতি কীভাবে দরুদ পড়ব? রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী, কামা বারাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীম। ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। (অর্থ: আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ এবং তাঁর সন্তানসন্ততির ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ এবং সন্তানসন্ততির ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান।) (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৭)
আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনাকে সালাম দেওয়ার পদ্ধতি তো আমরা জেনেছি। আপনার প্রতি দরুদ কীভাবে পড়ব? তিনি বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইব্রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাক্তা ‘আলা ইব্রাহীম। (অর্থ: আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের ওপর বরকত দান করেছেন।) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৫৮)
আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাক্তা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম ফিল ‘আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম্ মজীদ। (অর্থ: আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবারবর্গের ওপর দুনিয়ার সকল জাতির মধ্যে বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত। আর সালাম তেমনই, যেমন তোমাদের জানা আছে।) (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৫)
নবীজির (সা.) এই শেষবাক্য ‘সালাম তেমনই, যেমন তোমাদের জানা আছে’, এর মানে হলো, ‘আত্তাহিয়্যাতু’র মধ্যে যে-সালামের কথা আছে। অর্থাৎ, ‘আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়ুহান্ নবীয়্যু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা তুহু (আপনার প্রতি সালাম, হে নবী, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত আপনার প্রতি বর্ষিত হোক)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৩৫; মুসলিম, হাদিস: ৪০২)
জায়েদ ইবনে খারেজা (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার ওপর দরুদ পড়ো, বেশি বেশি দোয়া করো এবং বলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ (আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন)।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,২৯১)
নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা ব্যাপক। বিভিন্ন গ্রন্থে বহু দুরুদের বর্ণনা আছে। তবে বিশুদ্ধ হাদিসে যেসব শব্দে দরুদ বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে দরুদ পড়াই উত্তম।
আরও পড়ুনদরুদ শরিফ পড়ার ফজিলত২৩ নভেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ র আল ল হ ম ম ম র ওপর বর ণ ত র দর দ দর দ প ইন ন ক বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ